E-Paper

কলেজ পড়ার সুযোগ এসেছে, নেই ঈশিতাই

বছর উনিশের ঈশিতার বাবা দুলাল মল্লিক জানান, গত ২৫ অগস্ট মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় ভিক্টোরিয়া কলেজে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১৮
গত ২৫ অগস্ট নিজের বাড়িতে খুন হন কলেজছাত্রী ঈশিতা মল্লিক।

গত ২৫ অগস্ট নিজের বাড়িতে খুন হন কলেজছাত্রী ঈশিতা মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

ভুবনেশ্বরে দিদির কলেজেই জীববিদ্যা নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন ঈশিতা। গত মাসে ভর্তির পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। সম্প্রতি সেই কলেজে ভর্তির যে তালিকা বেরিয়েছে তাতে নামও উঠেছে তাঁর।

গত বছরই ‘নিট’ পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তারি পড়তে চেয়েছিলেন ঈশিতা। আশানুরূপ ফল না হওয়ায় এই বছর আবার পরীক্ষা দেন। বিকল্প হিসাবে ঠিক করা ছিল, জীববিদ্যা নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হবেন। কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে ভর্তির আবেদন করেছিলেন তিনি। ভুবনেশ্বরের কলেজে পরীক্ষা তো দিয়েইছিলেন। সেই সঙ্গে কলকাতায় ভিক্টোরিয়া কলেজেও ভর্তির আবেদন জানাবেন ভেবেছিলেন।

বছর উনিশের ঈশিতার বাবা দুলাল মল্লিক জানান, গত ২৫ অগস্ট মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় ভিক্টোরিয়া কলেজে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে পড়ার সুযোগ হয়ে গেলে আর অত দূর যাওয়ার ঝামেলায় যাবেন না বলে ভেবেছিলেন ঈশিতা। ওই কলেজের তালিকা আগে দেখে নিতে চেয়েছিলেন। তাই এক বার ঠিক করেও সে দিন আর বাবার সঙ্গে কলকাতা যাননি তিনি। আর সেটাই কাল হয়ে গেল। সে দিনই দুপুরে ঘরে ঢুকে মাথায় তিনটি গুলি করে তাঁকে খুন করা হয়। বুধবার দুলাল আফশোস করেন, “সে দিন ভর্তি হতে কলকাতায় গেলে মেয়েটা বেঁচে যেত।”

ঈশিতা ২০২৪ সালে কল্যাণীর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কৃষ্ণনগরে চলে এসেছিলেন। মাঝের একটি বছর তিনি শুধু ডাক্তারিতে ভর্তির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন। এই বছর মন বদলে ঠিক করেন, জীববিদ্যা নিয়ে স্নাচক স্তরে পড়বেন, বিএড-ও করবেন। ইচ্ছা ছিল, দিদির মতোই ভুবনেশ্বরে রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন কলেজে ভর্তি হওয়ার। ১৩ জুলাই সেখানে ভর্তির পরীক্ষা দেন তিনি। দিন তিনেক আগে পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। উত্তীর্ণের তালিকায় নাম আছে ঈশিতার। দিদি দীপান্বিতা সেখানে ইংরেজি অনার্স পড়ছেন, সঙ্গে বিএড।

দীপান্বিতা কলা বিভাগ নিয়ে পড়বেন বলেই এক সময়ে সপরিবারে কৃষ্ণনগর ছেড়ে কাঁচরাপাড়ায় গিয়ে থাকছিলেন দুলালেরা। কারণে কৃষ্ণনগরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগ নেই। কাঁচরাপাড়ার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। তাঁর সঙ্গে সেখানে ভর্তি হয়েছিল ঈশিতা আর তাঁদের ছোট ভাইও। সেখানেই ঈশিতার সহপাঠী ছিল এই খুনের অভিযোগে ধৃত দেশরাজ সিংহ।

ঈশিতার ঘর ঘটনার দিন থেকে তালাবন্ধ। বাইরে ড্রয়িং রুমের দেওয়ালে টাঙানো দুটো ছবি। একটা একেবারে ছোট্ট বেলার, আর একটা বছরখানেক আগে তোলা। জেলা সংশোধনাগারে শনাক্তকরণ পর্ব সেরে এসে সে দিকে চেয়ে ঈশিতার মা কুসুম বলেন, “গত বছর শিল্প মেলায় তোলা ছবি। দেখুন একেবারে পরির মত দেখতে ছিল না?” টানা অনিদ্রায় তাঁর চোখের কোল কালো। গলা দিয়ে স্বর বেরোতে চাইছে না। তবে সংশোধনাগার থেকে ফেরার পর তিনি যেন কিছুটা ধাতস্থ হতে শুরু করেছেন। ঈশিতার ছোটবেলার ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। তারপর বলেন, “আমাকে শক্ত হতেই হবে। খুনির চরম শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করতে হবে।”

ড্রয়িং রুমটায় সব কিছুই আগের মতো। খাওয়ার টেবিল। সোফা সেট। এক কোণে টেবিলের উপরে রাখা কম্পিউটার। দিনের বেশির ভাগ সময়টা এই কম্পিউটারের সামনেই কাটত মেয়েটার।

মনিটরে হাত বুলিয়ে বাবা দুলাল বলেন, “দিনের বেশির ভাগ সময় এখানেই কাটাত মেয়ে। নেটে পড়াশুনো করত। গত বছর তো এই কম্পিউটারের সামনে বসেই নিটের প্রস্তুতি নিয়েছে। অনলাইন ক্লাস করেছে।” বাড়ির এক কোণে পড়ে থাকা ঈশিতার কম্পিউটারটাও এখন যেন একলা হয়ে গিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Krishnanagar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy