E-Paper

সপ্তাহে দু’বার সদরের কলেজে আসত দেশরাজ

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সৈনিক স্কুলে গুন্ডামি করার দায়ে ২০২২ সালে বহিষ্কৃত হওয়ার পর দেশরাজ ‘প্রাইভেটে’ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২৬
গ্রাফিক আনন্দবাজার ডট কম।

গ্রাফিক আনন্দবাজার ডট কম।

হবিষ্যি করে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলেন দুলাল মল্লিক। কৃষ্ণনগর নিহত ছাত্রী ঈশিতা মল্লিকের বাবা। পরনে দুধ-সাদা ধুতি জড়ানো। মেয়ের মুখাগ্নি করার পর তিনি ‘কাছা’ নিয়েছেন। চোখে মুখে ক্লান্তি আর শোকের ছাপ স্পষ্ট। কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে তাঁর— “শ্মশানে মেয়ের মৃতদেহের খাটে কাঁধ দিয়েছি। আর কাছা পরে হবিষ্যি করছি। আমার মতো কপাল আর ক’টা বাবার হয়?”

বুধবার দুপুর আড়াইটে। সোমবার এ রকম সময়ই ঘরের মেঝেয় মেয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিলেন মা কুসুম মল্লিক। তার পর থেকে ঝড় বয়ে গিয়েছে গোটা পরিবারের উপর। পুলিশের আনাগোনা, আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশীদের ভিড়। মঙ্গলবার রাতে মৃতদেহ সৎকারের পর থেকে আস্তে-আস্তে ফাঁকা হয়েছে রাস্তার পাশে দোতলা বাড়িটা। হাতে-গোনা কয়েক জন আত্মীয় পরিজন এখনও আছেন।

বাড়ির মূল ফটকের সামনে বসে ছিলেন কর্তব্যরত এক সিভিক কর্মী। তাঁর কাছে খবর পেয়েই বেরিয়ে আসেন দুলাল। প্রথমেই জানতে চান, “তদন্ত কত দূর এগিয়েছে বলতে পারেন? এখনও তো ছেলেটাকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ!” একটু থেমে আবার প্রশ্ন করেন, “শেষ পর্যন্ত ধরা পড়বে তো? শাস্তি পাবে তো খুনিটা?” এ দিনও তিনি জানান, দেশরাজকে তিনি বা তাঁর স্ত্রী চেনেন না। মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক বা পরিচয় থাকার কথাও তাঁর জানা নেই।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সৈনিক স্কুলে গুন্ডামি করার দায়ে ২০২২ সালে বহিষ্কৃত হওয়ার পর দেশরাজ ‘প্রাইভেটে’ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিল। গত বছর সে কৃষ্ণনগরের একটি কলেজে ভর্তি হয়। সপ্তাহে দু’দিন সে কাঁচরাপাড়া থেকে কৃষ্ণনগরে আসত। পুলিশের অনুমান, সৈনিক স্কুলে একসঙ্গে পড়ার সময়ে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও ঈশিতারা কাঁচরাপাড়া থেকে কৃষ্ণনগরে চলে আসার পর তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। তা ঘোচাতেই দেশরাজ কৃষ্ণনগরের কলেজে ভর্তি হয়। সোমবারের আগেও সে ঈশিতাদের কৃষ্ণনগরের বাড়িতে এসেছে বলে পুলিশের ধারণা। এমন একটি ছবি তাঁদের হাতে এসেছে যাতে পরিবারের একাধিক সদস্যের সঙ্গে দেশরাজের পূর্ব পরিচয়ের ইঙ্গিত বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, দেশরাজের সঙ্গে ঈশিতার সম্পর্কের টানাপড়েনের পিছনে পারিবারিক কারণ জড়িয়ে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে দুই পরিবারের ভূমিকাই খতিয়ে দেখা হবে হতে পারে। তদন্তকারীদের ধারণা, শেষ দিকে ঈশিতা আর রাখতে চাইছিলেন না বলেই দেশরাজ তাকে খুনের ছক কষে।

দুলালের সঙ্গে কথোপথনের মধ্যেই মূল ফটকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল ঈশিতার ভাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ভাই। ঘটনাস্থলে সে-ই চিনতে পেরেছিল দেশরাজকে। সে-ই প্রথম সবাইকে জানিয়েছিল দেশরাজের নাম। পরিবারের অন্যেরা যখন তাকে চেনেন না বলে দাবি করছেন, ঈশিকার ভাই তাকে কী করে চিনল? তার কথায়, “আমরা কাঁচরাপাড়ায় যে মাঠে খেলতে যেতাম, সেখানে দেশরাজও খেলতে আসত। খুব উগ্র ছিল। খালি মারপিট করত বলে তাকে চিনতাম।”

বাড়িটার সামনে দিয়ে যে রাস্তা গিয়েছে, তা দিয়ে মিনিট পাঁচেক হেঁটে গেলেই ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক। উল্টো দিকে কিছুটা গেলে নদিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবন। সেখান থেকে শহরের সর্বত্র যাওয়ার টোটো মেলে। সদর মোড় হয়ে কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশনে যাওয়াও সহজ। তার চেয়েও সহজ জেলা প্রশাসনিক ভবনের পাশ দিয়ে ডন বস্কো স্কুল, বিপিসিআইটি কলেজের সামনে দিয়ে বেলডাঙা মোড় হয়ে স্টেশনের দিকে যাওয়া। সিসি ক্যামেরার নজরদারিও তেমন নেই। পুলিশের অনুমান, নিয়মিত কৃষ্ণনগরে আসায় দেশরাজ রাস্তাঘাট ভালই চিনে গিয়েছিল।

তবে এ সব কথায় ঢুকতে চান না ঈশিতার বাবা। তাঁর একটাই দাবি, “খুনিকে ধরে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক পুলিশ।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Krishnanagar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy