Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রেফারি সমস্যায় ভুগছে নদিয়ার ফুটবল

‘আগে ভাল করে শেখ, তারপরে খেলাবি’— খেলার মাঠে রেফারির উদ্দেশে ছোঁড়া এমন ‘আওয়াজ’ শোনেননি এমন লোক মেলা ভার! নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নয়, নানা দেশে নানা কালে এটাই দস্তুর। খেলার মাঠে কিছু রেফারির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহু বার। প্রশিক্ষিত রেফারির অভাবে খেলার মাঠে দু’দলের গোলমালে মাঝ পথে বন্ধ হয়েছে বহু খেলা। প্রশিক্ষিত রেফারি না থাকায় নদিয়া জেলা ফুটবলও দুর্দিন চলছে। দুঃশ্চিন্তায় কর্মকর্তারাও।

খেলার মাঠে রেফারির  সঙ্গে।—নিজস্ব চিত্র

খেলার মাঠে রেফারির সঙ্গে।—নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০২:১৪
Share: Save:

‘আগে ভাল করে শেখ, তারপরে খেলাবি’— খেলার মাঠে রেফারির উদ্দেশে ছোঁড়া এমন ‘আওয়াজ’ শোনেননি এমন লোক মেলা ভার!
নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নয়, নানা দেশে নানা কালে এটাই দস্তুর। খেলার মাঠে কিছু রেফারির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহু বার। প্রশিক্ষিত রেফারির অভাবে খেলার মাঠে দু’দলের গোলমালে মাঝ পথে বন্ধ হয়েছে বহু খেলা। প্রশিক্ষিত রেফারি না থাকায় নদিয়া জেলা ফুটবলও দুর্দিন চলছে। দুঃশ্চিন্তায় কর্মকর্তারাও।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারাও সমস্যার কথা মানছেন। সংস্থার সম্পাদক গৌতম বিশ্বাসের কথায়, শিকারপুর থেকে হরিণঘাটা, কল্যাণী থেকে পলাশী— সব মিলিয়ে চারশো ক্লাব ফুটবল খেলে। খেলাগুলি পরিচালনার জন্যে কমপক্ষে দু’শো রেফারি প্রয়োজন। অথচ খুব বেশি হলে প্রশিক্ষিত রেফারি রয়েছেন শ’খানেক। তাঁদের সকলে সব সময়ে জেলায় না থাকায় নিয়মিত খেলানোর জন্য মাঠে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘‘রেফারির উপরে মাঠের অনেক কিছু নির্ভর করে। ফলে দুঃশ্চিন্তা থেকেই যায়।’’
মে থেকে ডিসেম্বর— সাধারণত এটাই ফুটবল খেলার মরসুম। জেলা রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক সরকারের মত, ফুটবল খেলানোর জন্যে বহু নিয়ম জানতে হয়। তার মধ্যে ১৭টা অতি গুরুত্বপূর্ণ। রেফারিদের সেগুলো জানতেই হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় যাঁরা ফুটবল খেলান, তাঁদের অনেকেই সেটা জানেন না। ফলে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’’ ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকেই জানাচ্ছেন, আর্থিক কারণেই সে ভাবে কেউ এগিয়ে আসেন না। তবে আগের চেয়ে এখন কিছুটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।

রেফারিদের নানা সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি চাকদহ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে দু-দিনের ‘রেফারিং ডেভলপমেন্ট কোর্স’-এর অয়োজন করা হয়েছিল। চাকদহ নেতাজি সুভাষ স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই কর্মশালায় ছিলেন আইএফএর যুগ্ম সচিব জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫১ জন রেফারি প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলেন। প্রজেক্টরের সাহায্যে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খেলার বিশেষ অংশ দেখিয়ে রেফারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফুটবল আইন নিয়ে আলোচনা হয়। নিজেদের মধ্যে দলগত আলোচনাও হয়। সব শেষে স্টেডিয়ামের মাঠে গোটা বিষয়টি তাঁদের হাতেনাতে শেখানো হয়। সব মিলিয়ে দিনে কমপক্ষে ৯ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন কলকাতা রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রদীপ নাগ ও ফুটবল বিশেষজ্ঞ সুপ্রিয় ভট্টাচার্য। প্রদীপবাবুর মত, এমন শিবিরের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তবে দু-দিনে বিশেষ কিছু শেখানো যায় না। শিবির কমপক্ষে সাত-আট দিনের হওয়া প্রয়োজন।’’ তাঁর কথায়, ফিফা ফুটবলের আইন তৈরি করে। কোচ সেই আইন মেনে প্রশিক্ষণ দেন। রেফারি সেই আইন মেনে মাঠে খেলান। তিনি আরও বলেন, ‘‘ফিফার তৈরি ডিভিডি-র সাহায্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভাল ভাবে শিখলে অনেক বড় খেলায় মাঠেও বাঁশি বাজাতে পারবেন।’’

প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলেন শিমুরালির শম্ভু চক্রবর্তী। কথা প্রসঙ্গে শম্ভুবাবু মেনে নেন, আমরা মাঠে খেলাই ঠিকই। কিন্তু অনেক কিছুই আজানা থেকে যায়। সেগুলো শেখার প্রয়োজন রয়েছে। শিবিরে অনেক কিছু শিখেছেন বলেও স্বীকার করেন তিনি। একই কথা শুনিয়ে ধানতলার আড়ংঘাটার বাসিন্দা পরিমল সমাজপতিও এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

চাকদহ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অজয় দে জানান, রেফারিকে লেখাপড়া জানতে হয়। তাই ন্যূনতম মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা জরুরি। মাঠে একজন খেলোয়ারের চেয়ে রেফারিকে বেশি দৌড়তে হয়। তাই, শারীরিক সক্ষমতাও জরুরি। খেলানোর সময় বলের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে চোখের সমস্যা থাকলে রেফারিকে সমস্যায় পড়তে হয়। সব দিক বিচার করে সাধারণত রেফারিদের বয়স ১৮-২৯ বছরের মধ্যে হলে ভাল। তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে আরও বড় করে শিবিরের
ভাবনা রয়েছে।’’

চাকদহ নবীন সঙ্ঘের সদস্য অলোক চক্রবর্তীর মত, জেলায় ভাল রেফারির অভাব রয়েছে। রেফারি না পাল্টালে মজা আসে না। প্রতিদিন এক রেফারিকে দিয়ে খেলালে তাঁর মানসিক, শারীরিক চাপ পড়ে। খেলাতে সমস্যা হয়। অলোকবাবু বলেন, ‘‘ভাল রেফারি মাঠে না থাকলে মাঠের ভেতর-বাইরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটা ভুল সিদ্ধান্তে বড় গোলমালও হয়।’’ মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার কেষ্ট মিত্রের কথায়, মাঠে রেফারির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তাঁর সিদ্ধান্তের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। দুঃখের বিষয় তাঁদেরই অভাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE