Advertisement
E-Paper

জয়দেবদের জমিই রাস্তা বাঁধল ইদগাহের

টোপলা, প্রতাপনগর, নাজিরপুর ইদগাহ কমিটির সদস্য রফিক মালিথা জানান, তিনটি গ্রামের মাঝে প্রায় সাত বিঘা জমির উপরের এই ইদগাহটি প্রাচীন।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৪
জমিদাতা দুই ভাই জয়দেব ও বিশ্বজিৎ (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

জমিদাতা দুই ভাই জয়দেব ও বিশ্বজিৎ (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

নিজেদের সম্বল বলতে ‘বিঘে দুই ভুঁই’। তাতে সংসার চলে না দুই ভাইয়ের। অন্যের জমিতে দিনমজুরিও করতে হয় সময়ে, অসময়ে। পাটকাঠির বেড়া দেওয়া ঘরের আনাচে-কানাচে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট।

তেট্টের নাজিরপুরের দুই ভাই বিশ্বজিৎ পাল ও জয়দেব পাল হেলায় দান করে দিলেন তাঁদের কাঠা কয়েক জমি। আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ ঘটনা বলে মনে হলেও তাঁদের এমন উদ্যোগ সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ, ওই জমি তাঁরা দান করেছেন ইদগাহ যাতায়াতের রাস্তা তৈরির জন্য। এত দিন ওই ইদগাহে যাওয়ার কোনও রাস্তা ছিল না। ফলে একটা গ্রামের বাসিন্দাদের অন্য গ্রাম হয়ে ঘুরে যেত। বকরি ইদের দিন জয়দেবদের দানের জমিতে তৈরি নতুন রাস্তা উদ্বোধন হল। দুই ভাই খুলে দিলেন সেই রাস্তা। তাঁদের এই জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় লক্ষাধিক টাকা।

টোপলা, প্রতাপনগর, নাজিরপুর ইদগাহ কমিটির সদস্য রফিক মালিথা জানান, তিনটি গ্রামের মাঝে প্রায় সাত বিঘা জমির উপরের এই ইদগাহটি প্রাচীন। এখানে টোপলা, প্রতাপনগর ও নাজিরপুরের প্রায় চার হাজার মানুষ নমাজ পড়েন। নাজিরপুর ও টোপলা গ্রাম থেকে ইদগাহ মাঠে যাওয়ার দুটি পৃথক রাস্তা থাকলেও প্রতাপনগরের মানুষের ইদগাহ যাওয়ার সরাসরি কোনও রাস্তা ছিল না। সেই জন্য এত দিন তাঁদেরকে দু’কিলোমিটার পথ ঘুরে পাশের গ্রাম হয়ে ইদগাহে যেতে হত। দানের জমিতে নতুন রাস্তা তৈরির হওয়ায় সুবিধা হল সকলের।

স্থানীয় বাসিন্দা মুকুল মণ্ডল বলেন, “রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় জমির দাম প্রায় বারো লক্ষ টাকা। এত টাকা দিয়ে জমি কিনে রাস্তা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই কষ্ট করেই গ্রামের মানুষ ঘুরপথে ইদগাহে যেত।’’

তিনি জানান, ওই মাঠে বিশ্বজিৎ ও জয়দেব পালের সামান্য জমি সহ মোট ১৪ জনের জমি রয়েছে। তার মধ্যে ১২জন মুসলিম সম্প্রদায়ের আর বাকি জমির মালিক বিশ্বজিৎ ও জয়দেব।

মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা রাস্তার জন্য জমি দান করতে রাজি হয়ে যান। মাস কয়েক আগে রাস্তা করার জন্য ওই দুই পরিবারকে জমির কিছু অংশ ইদগাহকে বিক্রি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। দুই ভাই জানান, ইদগাহের রাস্তার জন্য তাঁরা জমি বিক্রি করবেন না। ইদগাহ কমিটির সদস্যরা তাতে খানিকটা দমে যান। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা অবশ্য জানান, বাকি বারো জনের মতো তাঁরাও ওই জমি বিনামূল্যেই দেবেন।

এর পরেই তৈরি করা হয় রাস্তা নির্মাণ কমিটি। রাস্তা নির্মাণ কমিটির সম্পাদক রুস্তম শেখের কথায়, “গ্রামের বাসিন্দারাই রাস্তা তৈরির জন্য ৯০ হাজার টাকা চাঁদা তুলেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান মণ্ডল পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করেছেন। কিন্তু, ওই দুই ভাই জমি দান না করলে রাস্তা তৈরিই করা যেত না।’’ গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এখানে সম্প্রীতির একটা পরিবেশ দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছে। আশা করি তা আরও মজবুত হবে।” বিশ্বজিৎ বলেন, “এলাকায় হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি বাস করি। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ ধর্মের জিগির তুলে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করতে চায়। আমরা চাই, তা বন্ধ হোক।”

Eidgah Humanity Donation তেহট্ট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy