Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
IPL 2020

আইপিএল নিয়ে বাজি? ‘খবর নেই’ 

কল্যাণী ও আশপাশের এলাকায় অনলাইনে জুয়ার কারবার কয়েক বছর ধরে চলে আসছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ 
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০২:০৭
Share: Save:

আইপিএল শুরু হতেই অনলাইনে জুয়ার বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। ইংল্যান্ডের মাঠে একাধিক সিরিজ়, ছোটখাটো টি-১০, টি-২০ সিরিজ়, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে মহিলা ক্রিকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ও ইংল্যান্ডের মহিলা দলের টুর্নামেন্ট তো চলছেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আইপিএল। দিনে অন্তত পাঁচটা করে খেলা চলছে। আর তাতেই কল্যাণী শহর ও আশপাশের জুয়া ব্যবসায়ীরা ফুলে-ফেঁপে উঠছে আর বহু লোকের সর্বনাশ হচ্ছে বলে খবর। যদিও পুলিশের দাবি, তাদের কাছে এমন কোনও খবর নেই।

কল্যাণী ও আশপাশের এলাকায় অনলাইনে জুয়ার কারবার কয়েক বছর ধরে চলে আসছে। এক জুয়াড়ির দাবি, আইপিএল-এ অন্তত ৩০ লক্ষ টাকার বাজি ধরা হয়। বড় জুয়াড়িরা কল্যাণী ও ২৪ পরগনার কিছু লোকের কাছ থেকে ‘প্যানেল’ তৈরি করে নেন। একটি ‘প্যানেল’ তৈরি করলে মেলে একাধিক ‘আইডি’। সেই সব আইডি-তে ব্যালান্স ভরে লোকজনের মধ্যে বিলি করা হয়। সেই আইডি-তে লেখা থাকে, কবে কখন কাদের খেলায় কার পক্ষে বাজি ধরলে কত টাকা মিলবে। খেলার শুরুর আগে বাজির একটা হার দেওয়া হয় অর্থাৎ কোন দলের হয়ে কত টাকা লাগালে কত পাওযা যাবে। এর পরে খেলা যত এগোয়, ততই পাল্টে যেতে থাকে বাজির দর। শুধু জেতাহারার বাজি নয়, কোন উইকেটে কত রান উঠবে, ২০ ওভারে কোনও দল কত রান করবে, প্রথম ৬ ওভার, ১০ ওভার ও ১৫ ওভারে কত রান উঠবে, সব কিছু নিয়ে বাজি ধরা চলে।

এক প্যানেল মালিকের দাবি, এই জুয়া কে বা কারা অন্তরাল থেকে নিয়ন্ত্রণ করে তা প্রায় কেউই জানে না। তবে এতে লাভ আছে বুঝে এখন কল্যাণীর অনেকেই নিজেরা কায়দা করে প্যানেল বানাচ্ছে। আইডি তৈরি করছে। এর ফলে কল্যাণীরই অনেকে এখন জুয়ার পান্ডা হয়ে উঠেছে। এই জুয়ায় ৯০ শতাংশ লোকই হারে। ফলে জুয়ার কারবারিদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা আসে।

স্থানীয় কয়েকটি সূত্রের দাবি, কল্যাণীর ভুট্টাবাজারের এক বাসিন্দা বছরভর সুদের কারবারের পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ টাকা টাকা বাজি খেলান। আইপিএলের মরশুমে তিনি অন্তত ১৫ লক্ষ টাকা আয় করেন। কল্যাণী সীমান্তের এক যুবক ডেলিভারি বয়ের কাজের পাশাপাশি এই বাজিও নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর নিজেরই দাবি, প্রতি দিন অন্তত ৫০ হাজার টাকার বাজি ধরা হয়। কল্যাণীর ২ নম্বর বাজারের এক জন দোকানদারও প্রায় প্রতি দিন কয়েক লক্ষ টাকার জুয়ার কারবার করেন বলে খবর।

একটি সূত্রের দাবি, কল্যাণীর অনুকূল মোড়ের এক যুবকও বছর তিন-চারেক ধরে এই জুয়ার কারবার করছেন। তাঁর মাধ্যমে বাজি ধরে ওই এলাকার বহু যুবক, স্কুল শিক্ষক, গৃহশিক্ষক সর্বস্ব খুইয়েছেন। তাঁদের এক জনের আক্ষেপ, এখনও কয়েক লক্ষ টাকার দেনা রয়েছে।

কল্যাণী মহকুমা এলাকার এক সরকারি কর্মীর দাবি, “এ বছরই প্রথম খেলতে শুরু করেছিলাম। ১৫ হাজার টাকা ইতিমধ্যেই হেরে গিয়েছি। এখন আর খেলছি না।” তবে কল্যাণীর এক পরিচিত জুয়াড়ির দাবি, “আমি কুড়ি বছর ধরে তাসের জুয়া খেলছি। আর কয়েক বছর ধরে ক্রিকেট, ফুটবল, কবাডি, ব্যাডমিন্টন, টেনিস— সব খেলাতেই বাজি ধরছি। ছ’লাখ টাকা দেনা রয়েছে। কিন্তু সংসার তো চলছে। নতুনেরা এসে হেরে গিয়ে আইডি-র বিরুদ্ধে কথা বলছেন।”

তবে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, “এখানে ক্রিকেট নিয়ে বাজি বা অন্য কোনও জুয়া চলে না। আমাদের কাছে অন্তত তেমন কোনও খবর নেই। তবু যখন কথা উঠছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IPL 2020 Betting Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE