Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

টোলের জুলুমই হিলোরার রুজি

দু’চাকা দশ, চার চাকার ধুলো উড়লে ত্রিশ। লজঝড়ে সাইকেলেও রেয়াত নেই, পাঁচ টাকা। আর মানুষ প্রতি তিন।

কর: কড়ি ফেলে পথ পার। —নিজস্ব চিত্র।

কর: কড়ি ফেলে পথ পার। —নিজস্ব চিত্র।

বিমান হাজরা
সুতি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

দু’চাকা দশ, চার চাকার ধুলো উড়লে ত্রিশ। লজঝড়ে সাইকেলেও রেয়াত নেই, পাঁচ টাকা। আর মানুষ প্রতি তিন।

তোলাবাজিটা চলছে সরাসরি, দিনে-দুপুরে। হাতের তেলো উল্টে ঘাম মুছে সটান বলছেও তারা— ‘‘জুলুমের কি আছে ভাই, টোল দিলে যাও, না হলে অন্য পথ দেখো। মেলা কথা বাড়িও না।’’ তবে, হ্যাঁ, ছাড় একটা আছে, সরকারি লোক। না হলে, ফেলো কড়ি পার হও রাস্তা!

সুতির হিলোড়া-নয়াগ্রাম সড়কে স্থানীয় ব্লক অফিসের নাম ভাঙিয়ে মাসের পর মাস ধরে এই জুলুমের চলাচল। যার প্রতিবাদ করতে গেলেই ‘মুখ থেঁতলে দেব’ কিংবা ‘পিটিয়ে ছাল ছাড়িয়ে’ দেওয়ার শাসানি।

বীরভূম থেকে পাগলা নদীর একটি নালা সুতির এই সড়ক ফুঁড়ে গিয়েছিল এক সময়ে। ঘাটের পাড়ে দাড়িয়ে থাকত এক পালি নৌকা, নাম ছিল ‘সর্বশ্রী ঘাট’। নিয়ম করে প্রতি বছর ডাক হত সে ঘাটের। ইজারাদারের নৌকোয় মানুষ পার হত নালা।

বছর কয়েক হল, সে নালা মজে হেজে এখন নিপাট স্মৃতি। ফেরিঘাট তাই উঠে গিয়েছে। সরকারি নথিপত্রে নিলাম-ডাক বন্ধ হলেও হিলোড়ার জনা কয়েক যুবক তাদের আয়ের রাস্তা খুলে নিয়েছে নতুন করে। ‘টোল’ নিয়ে শুরু করেছে ঘাট পারাপার। ব্লক অফিসের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন জানেন যা হদ্দ জুলুমবাজি। কিন্তু বাধা দেবে কে, ‘দাদা’রা আছে না?

হিলোড়া থেকে সড়ক পথ গিয়েছে নয়াগ্রাম, কুসুমগাছি হয়ে বীরভুমের কলহপুর, হরিশপুর, বেলডাঙা, গ্রামে। জঙ্গিপুর কিংবা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরতে ওঠাই পথ। বীরভুম থেকে অগুন্তি বালি বোঝাই ট্রাক্টরও ফিরছে ওই পথে।

হিলোড়ার সুজিত দাস বলেন, “পাগলা নদী কবে মজে গেছে। ঘাট বন্ধ। তবু টাকা গুনতে হচ্ছে। এটা কী জুলুমবাজি বলুন তো!’’ হালেমা বিবিরও ও পথে না গেলে নয়, বলছেন, “ চাহিদা মত টাকা না দিলে মারতেও আসে। পঞ্চায়েত প্রধানকে বহুবার বলা হয়েছে। মাথাই ঘামাতে চান না।”

সড়কের পাশে ছাউনিতে বসে হারুন খাঁ। বালি বোঝাই ট্রাক্টর আসতেই সামনে দাঁড়ালেন। নগদ ত্রিশ টাকা গুনে তবে ছাড় পেল। ট্রাক্টর চালক ফিস ফিস করে বলছেন, ‘‘না দিলে কালকে মারধর করবে যে!’’

হারুণের স্পষ্ট কথা, “কীসের জুলুম, আহিরণে সুতি ১ ব্লকের বিডিও অফিস থেকে ডাক করে ঘাট নিয়েছি। তারাই রেট বেঁধে দিয়েছে।’’ সুতির বিডিও দীপঙ্কর রায় অবশ্য জানেন না এ সব। বলছেন, “ওখানে তো কোনও নদী নেই, তাহলে ঘাট কিসের।”

হারুন সে সব জানেন না, ‘‘তা যাই বলুন, পেট চালাতে টোলই ভরসা আমাদের!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toll Collection Suti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE