মুঙ্গের টু মুর্শিদাবাদ— এই আর্মস রুটটা বেশ পুরনো। প্রতীকী ছবি।
যখন যেমন, তখন তেমন। ঠিক যেন মরসুমি কারবার!
দুয়ারে ভোট। আর সেই ভোটের সৌজন্যে ব্যস্ততা বেড়েছে ওদেরও। ফোন আসছে নাগাড়ে। আসছে হরেক কিসিমের ‘অর্ডার’। কারও দরকার ‘কাচের জিনিস’, কেউ চাইছে, ‘পোক্ত মেশিন’, কেউ আবার আগেই বলে রেখেছে ‘লাইট হলেও চলবে’।
এ গুলো আসলে সবই নানা রকমের আগ্নেয়াস্ত্রের ছদ্মনাম। ডোমকলে আগ্নেয়াস্ত্রের এক কারবারি আবার মুচকি হাসছে, ‘‘নামেও অনেক কিছু আসে যায়! পুলিশের খোচরের অত্যাচারে ঘনঘন নাম বদলে ফেলতে হয়। নইলে ঝক্কি বাড়ে। মোদ্দা কথাটা হল, জিনিসটা ঠিক ভাবে, ঠিক হাতে পৌঁছে দেওয়া।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু সেটা যে সব সময় হয়ে উঠছে না তা কবুল করছে আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারিরাও। তাদেরই এক জনের আক্ষেপ, ‘‘এক মুর্শিদাবাদে রক্ষা নেই, তার উপরে কোমর বেঁধে নেমেছে ঝাড়খণ্ড, বীরভূম ও মালদহের পুলিশ। ফলে খুব সতর্ক ভাবেই কারবার সামলাতে হচ্ছে।’’ কিন্তু সতর্ক থেকেও সবসময় শেষরক্ষা হচ্ছে না। সম্প্রতি জলঙ্গিতে আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার ফেঁদে বসেছিল দাদা-বৌদি। পুলিশের নজর পড়তেই দাদা চম্পট দেয় সটান কেরল। মাঝে কিছু দিন ব্যবসা বন্ধ থাকে। পরে বৌদির কাছে হাতেখড়ি দিয়ে কারবারের হাল ধরে দেওর। গত বৃহস্পতিবার পুলিশ জলঙ্গির টলটলিতে হানা দিয়ে ৯টি পিস্তল, ২টি মাসকেট, ৩৪ রাউন্ড গুলি। পুলিশ গ্রেফতার করেছে দেওর নজরুল মণ্ডল ওরফে নাজুকে। দাদা-বৌদি এখনও পলাতক।জেলা পুলিশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৩৮৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮৪৫টি গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধরা পড়েছে ৪৩২ জন। এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫১০টি গুলি উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৮ জনকে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দাদা-বৌদির বিরিয়ানি কিংবা চায়ের দোকানের কথা জানি। কিন্তু দাদা-বৌদি-দেওরের এমন কারবারও এ বার দেখলাম। ফেব্রুয়ারিতে আগ্নেয়াস্ত্রের এক মহিলা কারবারিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
মুঙ্গের টু মুর্শিদাবাদ— এই আর্মস রুটটা বেশ পুরনো। পুলিশের নজরদারি বাড়তে সেই রুটটাও কখনও কখনও বদলে ফেলছে কারবারিরা। কিন্তু তার পরেও ভোটের বাজারে চড়া দামের আশায় ঝুঁকি নিচ্ছে কারবারিরা। হাতবদল হচ্ছে মজুত করে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র।
সেই মজুতের বহর কেমন?
পুলিশ সূত্রে খবর, গত মাস চারেকে জলঙ্গির সীমান্তের গ্রাম থেকে প্রায় ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কোথাও মাটির নীচে, কোথাও বাঁশবাগানে কোথাও আবার বালির চরে পুঁতে রাখা ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। এখন ভোটের আগে এই মজুত করে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র ‘অর্ডার’ অনুযায়ী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের কাছে আরও একটি তথ্য এসেছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘মূলত পাচারের কাজে নিজেদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখে পাচারকারীরা। কিন্তু এখন ভোটের বাজারে দ্বিগুণ দামে সেই অস্ত্র বিক্রি করে দিচ্ছে তারা। সম্প্রতি এমন লাভ করতে গিয়ে ধরাও পড়েছে এক পাচারকারী।’’ ভোটের ডোমকল নিয়ে এমনিতেই উদ্বেগে থাকে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ-প্রশাসন। একটা সময় এই এলাকায় সকেট বোমার রমরমা ছিল। কিন্তু সকেটে বিস্তর ঝুঁকি থাকায় এখন তার কদর কমেছে। চাহিদা বেড়েছে সেভেন কিংবা নাইন এমএম পিস্তলের।
জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘শুধু ভোট বলে নয়, এ জেলা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নির্মূল করাটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই মতোই বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। চলছে নিয়মিত অভিযানও।’’
তা চলুক। কিন্তু, কাচের জিনিসের কদর কি রাশ পড়েছে, প্রশ্ন সেটাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy