Advertisement
E-Paper

ভূত বনাম ভারী বুট

১৪’মে, ২০১৮। পঞ্চায়েত ভোটের বছর ঘুরতে চলল। সেই চেনা রোদ্দুরেই এ বার ফের ভোট, লোকসভা। জহিরুলের মতো না-ভোট স্মৃতি নিয়ে মুর্শিদাবাদের গ্রাম গঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছেন অজস্র গ্রামবাসী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫৭

বাগডাঙার মাঠ পেরিয়ে দু’পা হাঁটলেই বুথ। মাঠের আলপথ জুড়ে টান টান পতাকা— লাল, তেরঙা, জোড়া ফুল। জহিরুল সেই সব দেখতে দেখতেই মাঠ ছাড়িয়ে রাস্তায় উঠতেই গাছতলা থেকে ধমক উড়ে এসেছিল— ‘বারণ করেছিলাম, ভুলে গেছিস না কি!’

গলা চড়ছিল লোকটার— তোদের ভোট তো আমরাই দিয়ে দেব বলেছিলাম...। লুঙ্গির কোঁচড় থেকে লম্বাটে পাইপগানটা বের করে এগিয়ে আসার মুখ গালমন্দের সঙ্গে এ বার জুড়ে গিয়েছিল কড়া শাসানি। জহিরুল আর সাহস করেননি। আলপথ ধরেই ফিরে গিয়েছিলেন গ্রামে।

১৪’মে, ২০১৮। পঞ্চায়েত ভোটের বছর ঘুরতে চলল। সেই চেনা রোদ্দুরেই এ বার ফের ভোট, লোকসভা। জহিরুলের মতো না-ভোট স্মৃতি নিয়ে মুর্শিদাবাদের গ্রাম গঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছেন অজস্র গ্রামবাসী। তাঁদের কারও স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে পিঠের কালশিটের দাগ কারও বা মাথায় সেলাইয়ের হাল্কা চিহ্ন। ভয়ের ভোটে আর যাই হোক, আখরিগঞ্জের সামসুল হুদা বলছেন, ‘‘নির্বাচন হয়নি।’’

বেলডাঙার কুমারপুরের অর্জুন সরকারও পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। বলছেন, ‘‘সে দিন সকালে ভোট দিতে বেরিয়েছিলাম। বুথে পৌঁছনোর আগে জানতে পারলাম, তুমুল গন্ডগোল শুরু গেছে। দু’পা এগোতেই গুলির শব্দ, চোখের সামনে গুলি লেগে ধপ করে পড়ে গেল এক জন। আর বুথে যাই!’’

নওদার তোফাজ্জেল শেখের ঝুলিতেও রয়েছে ভয়ের ভোটের দগদগে স্মৃতি। বলছেন, ‘‘বিরোধী দলের দেওয়াল লিখেছিলাম। রাতে কড়া নেড়ে তৃণমূলের লোকেরা জানিয়ে গেল, ‘ভোট দিতে গেলে লাশ ফেলে দেব। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েও মনে হল, শুধু শুধু প্রাণটা দেওয়ার কোনও মানে হয় না।

আর যাইনি।’’

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে প্রায় ৬৪ শতাংশ আসনে শাসকদল বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। আর এ বার? বিরোধীরা সবাই এক যোগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভারী বুটে বুক বেঁধেছে। ঝকঝকে বেয়নেট, গমগমে বুট— ভরসা কি সত্যিই ফিরছে? লাখ টাকার সেই প্রশ্নটাই থমকে আছে গাঁ-গঞ্জে।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চ দিনে ভরসা জোগালেও রাত যে আঁধার, তা মনে করেই শিউরে উঠছেন ডোমকলের আবিদুল আলম। বলছেন, ‘‘ঘরে ঘরে কড়া নেড়ে শাসক দলের লোকজন শাসিয়ে গিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী কিন্তু সারা বছর থাকবে না!’’ শুধু তাই নয়, তৃণমূলের অন্দরের খবর, বুথের ধারে কাছে এ বার আর লাঠি-বন্দুকের শাসন নয়। গ্রাম থেকে বেরিয়ে বুথমুখী হওয়ার রাস্তাই রুখে দেবেন কর্মীরা— এমনই অভিযোগ কংগ্রেস এবং বিজেপি’র। বহরমপুরের কংগ্রেসের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘা এখনও দগদগে। সেটা ভোলা যায় কী করে? তাই আমরা সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়েছি।’’

যা শুনে জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃদু হাসছেন, ‘‘বুথে এজেন্ট দিতে না পেরে কত গল্পের গরুই যে গাছে

তুলল বিরোধীরা!’’

Lok Sabha Election 2019 CRPF Violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy