ভোট কেন্দ্রে চট দিয়ে ঘেরা ঘরে এক বার তিনি ঢুকছেন, আবার বেরিয়ে আসছেন। কখনও আবার বাইরে থেকে চট টেনে উঁকি দিচ্ছেন ইভিএমের দিকে, কখনও আবার ভিতর থেকে চট টেনে উঁকি মারছেন ভোটকর্মীদের দিকে।
জলঙ্গির বছের আলির এমন হাবভাব ভাল ঠেকেনি এক ভোটকর্মীর। তিনি আঁচ করেন, কিছু একটা গন্ডগোল নিশ্চয় হয়েছে। চেয়ার থেকে উঠে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে সেই ভোটকর্মী জানতে চান, ‘‘কী ব্যাপার চাচা, সমস্যাটা কী?’’
বছের আলি চাপা গলায় বলেন, ‘‘না বাপ, সমস্যা তেমন কিছু নয়। সবাই বলছিল, এ বারে নাকি ভোট হবে মেশিনে। সেই মেশিনেই ভোট দিতে হবে। তা তোমাদের সেই মেশিনটা কোথায়?’’
এজেন্টদের ভয়ে চট দিয়ে ঘেরা ঘরে যেতে পারছেন না ভোটকর্মী। শেষে চট টেনে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ‘‘এই তো চাচা, মেশিন আপনার চোখের সামনেই রাখা।’’ সেই ভোট-মেশিন (ইভিএম) দেখে চাচা একেবারে আকাশ থেকে পড়লেন। তার পরে তিনি বললেন, ‘‘এই তোমাদের ভোটের মেশিন! আমি তো ভেবেছিলাম আমার স্যালো মেশিনটার মতো বড় কিছু একটা হবে। কিন্তু এ তো দেখছি আমার নাতির রেডিয়োটার থেকে একটু বড়। এত ভোট নিয়ে এই ছোট্ট মেশিন দিল্লি যাবে কী করে গো বাপ?’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বেশ কিছুক্ষণ বোঝানোর পরে ভোট দিলেন বছের। তার পরেও তিনি ইভিএমের দিকে উঁকি মারলেন বেশ কয়েক বার। আসলে তাঁর সন্দেহ কাটছিল না। তার পরে সেই ভোটকর্মী নয়, সটান প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে গিয়ে বছের বললেন, ‘‘বাপ, আমার ভোটটা সাবধানে রাখিস। শুধু এক বার পিক করে আওয়াজ হল। তার পরে তো কিছুই টের পেলাম না।’’ মুচকি হাসলেন প্রিসাইডিং অফিসার। আর প্রথম বার ইভিএমে ভোট দিয়ে বড় চিন্তা নিয়ে ঘরে ফিরলেন বছের।
রানিনগরের চর বাঁশগড়ার আব্দুল মোতালেবও প্রথম বার ইভিএমে ভোট দেওয়ার পরে বাড়ি ফিরে মোটেই শান্তি পাননি। মনটা বড় খুঁতখুঁত করছিল তাঁর। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সেই বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে কাগজে ছাপ মেরে এলাম। আর এখন কি না আমাকে মেশিন দেখাচ্ছে। এক বার শুধু পিক করল। আর কোনও কথা নেই। আমি আবার ভোট দেব।’’
কচি-কাঁচাদের চোখে দেওয়ার কাজল পকেটে গুঁজে ফের বুথে হাজির তিনি। ভোটকর্মীরা তাঁকে বোঝালেন যে, তাঁর ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এবং সেই ভোট ঠিকঠাকই হয়েছে। আর ভোট দেওয়ার যাবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আচমকা একছুটে তিনি পৌঁছে যান ইভিএমের কাছে। তার পরে কাজলের কালি দিয়ে ইভিএমে পছন্দের চিহ্নে বুড়ো আঙুলের টিপছাপ দিয়ে বেরিয়ে এলেন তিনি। সকলে অবাক। মোতালেব তৃপ্ত। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে চালাকি! সাত গাঁয়ের মোড়লেরা আমাকে চেনে। বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে? আমি মেশিন চালায়নি? আমাকে দেখাচ্ছে ভোটের মেশিন মিশিং! এত সহজে আমাকে বোকা বানানো যাবে না।’’
আর ইভিএম নিয়ে ভয়ানক কাণ্ড বাধিয়েছিলেন ইসলামপুরের মমেজান বেওয়া। বুথে ঢুকে আর কোনও মতেই তিনি ইভিএমে আঙুল দেবেন না। তাঁর এক গোঁ, ‘‘ওতে আমি হাত দেব না। তোদের মিনতি করছি, আমাকে ছাপ্পা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দে।’’ ভোটকর্মীরা অবাক। তাঁরা জানতে চান, ‘‘কেন, ইভিএমে ভোট দিতে আপনার অসুবিধা কোথায়?’’
তখন বৃদ্ধা বলেন, ‘‘আমার নাতিরা বলেছে, এতে কারেন্ট আছে! এই বয়সে শক খেলে আমি কি আর বাঁচব?’’ শেষতক বহু বোঝানোর পরেভোট দেন মমেজান। তবে সেই প্রথম। এবং সেই শেষ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy