Advertisement
E-Paper

আলু তুলছে সস্তার যন্ত্র

ফুট ছয়েক লম্বা একটা লোহার রড। নীচের দিকে আড়াআড়ি লাগানো ন’ইঞ্চি চওড়া লোহার ধারালো ফাল। ক্রমশ সামনের দিকে ছুঁচলো হয়ে এসে সটান ঢুকে গিয়েছে আলু খেতের ‘ভালি’ বা আলুর লম্বা সারিতে।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০০:৩৬
যান্ত্রিক: মাঠ থেকে তোলা হচ্ছে আলু। নিজস্ব চিত্র

যান্ত্রিক: মাঠ থেকে তোলা হচ্ছে আলু। নিজস্ব চিত্র

ফুট ছয়েক লম্বা একটা লোহার রড। নীচের দিকে আড়াআড়ি লাগানো ন’ইঞ্চি চওড়া লোহার ধারালো ফাল। ক্রমশ সামনের দিকে ছুঁচলো হয়ে এসে সটান ঢুকে গিয়েছে আলু খেতের ‘ভালি’ বা আলুর লম্বা সারিতে। লোহার রডের সঙ্গে লাগানো একটি চাকা। চাষির হাতের জোরালো টানে চাকা লাগানো ওই যন্ত্র চলতেই মাটির ভিতরে ঢুকে লোহার ফলা তুলে আনছে নীচের আলু। আবার ওই চাকাই অন্য সময়ে যন্ত্রকে রাস্তা বা মাঠ দিয়ে টেনে আনতে সাহায্য করেছে।

চিরাচরিত হাল-বলদের পরিবর্তে জমি থেকে আলু তোলার এই যন্ত্র ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে জেলার আলু চাষিদের মধ্যে। কোনও নামী কোম্পানির তৈরি বহুল প্রচারিত দামি মেশিন ‘পট্যাটো ট্রিগার’ নয়। নিতান্তই স্থানীয় প্রযুক্তিতে মফস্‌সল শহরের লেদ মেশিনে তৈরি আলু তোলার ওই অভিনব যন্ত্রটির কথা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। হু হু করে তার চাহিদাও বাড়ছে। এমন একটি পরিকল্পনা কার মাথায় প্রথম এসেছিল তাও অজানা। আলু চাষিরা অবশ্য সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতেও খুব একটা রাজি নন। নতুন ওই যন্ত্রে তাঁদের খুব সুবিধা হয়েছে, এইটুকুই যথেষ্ট। দামও সাধ্যের মধ্যে। বারোশো থেকে দেড় হাজার টাকা।

পূর্বস্থলী অঞ্চলের আলুচাষি সুজয় মান্না কিংবা নদিয়ার রমেন হাজরা জানাচ্ছেন, লাঙল দিয়ে আলু তোলার খরচ এবং ঝামেলা দুই ক্রমশ বাড়ছে। যেমন এই মরসুমে লাঙল দিয়ে আলু তোলার খরচ বিঘা প্রতি কম বেশি চারশো টাকা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সমস্যা হল, জমির পরিমাণ বেশি না হলে লাঙল ভাড়া নিয়ে লাভ নেই। ফলে যাদের জমি অল্প তাদের এই যন্ত্রে বেশ লাভ হচ্ছে।

কিন্তু কী ভাবে পেলেন ওই যন্ত্র? সুজয়বাবু বলেন, “হুগলির আরামবাগ, চাপদানি, হরিপালের মতো বেশ কিছু এলাকায় প্রথম ওই যন্ত্র দেখা গিয়েছিল। অন্যদের মুখে খবর পেয়ে আমরাও কিনে এনেছি।”

বঙ্গ হেমব্রম পনেরোশো টাকা দিয়ে কিনেছেন আলু তোলার ওই যন্ত্র। তিনি বলেন, “আমার দেড় বিঘে জমি আছে। সেই জমিতে আলু তুলতে চাইতো না অনেকে। বলত, সামান্য ওই জমির আলু চষে লাভ নেই। খুব সমস্যায় পড়তাম। এখন মেশিন দিয়ে নিজের খুশি মতো আলু তুলতে পারছি।” শুধু চাষিরাই নন, যন্ত্রের প্রশংসা কৃষি কর্তাদের মুখেও। বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানাচ্ছেন, এমনিতেই হালবলদের যুগ আর নেই। খরচের কারণে ছোট কৃষকের পক্ষে হালবলদ রাখাই সম্ভব হচ্ছে না। একজোড়া বলদের দাম এবং সারা বছরের খোরাকি, ওষুধ মিলিয়ে বিস্তর টাকা খরচ। ফলে ভাড়ার বলদ ভরসা। কিন্তু বেশির ভাগ চাষির জমিই এখন টুকরো হয়ে গিয়েছে। এক লপ্তে দেড় দু’বিঘা জমি মেলা দুষ্কর। সেখানে লাঙল চালানো দায়। এই অবস্থায় এই ধরনের যন্ত্র ক্ষুদ্র চাষিদের কাছে আদর্শ।

আলু তোলার এই যন্ত্র আপাতত হুগলি থেকে এলেও সরল নকশার যন্ত্র বানাতে তৈরি হচ্ছেন নদিয়া কিংবা বর্ধমানের লেদ মালিকেরাও।

Potato Cultivation Machine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy