কাঁটাতার পেরিয়ে মাধ্যমিক। — ফাইল চিত্র।
প্রতিবন্ধকতা ছিল অনেক। তবে সে সব কাটিয়ে লক্ষ্যের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গিয়েছে ওরা। পড়াশোনাকেই হাতিয়ার করেছিল লড়াইয়ের। কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে এ পারে এসে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে চরমেঘনা গ্রামের পাঁচ পড়ুয়া। স্বভাবতই যা নিয়ে খুশি ওই পাঁচ পড়ুয়ার পরিবার, গ্রামবাসীরা।
ওই পাঁচ ছাত্র-ছাত্রী বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। জানা গিয়েছে, সকলেই হোগলবেড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের ছাত্র-ছাত্রী। ছাত্রদের যমশেরপুর বিএন হাইস্কুল এবং ছাত্রীদের যমশেরপুর বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র পড়েছে। অন্য দিকে, বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, চরমেঘনা গ্রামের ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
চরমেঘনা গ্রাম থেকে চার ছাত্র ও এক ছাত্রী এ বারের মাধ্যমিকে বসছে। ছাত্রী সুস্মিতা মণ্ডল বলে, ‘‘বাবা গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। বাবার ওই আয়ের মধ্যেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, ভাল ভাবে পরীক্ষা দিতে পারব। স্কুলে যাওয়ার মতোই সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারব।’’
গ্রামের দিনমজুর বাবলু সর্দারের ছেলে সবুজ সর্দার। সেও এবারে পরীক্ষা দিচ্ছে। বুধবারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে চরম ব্যস্ততা। তার ফাঁকেই সবুজ বলে, ‘‘বাড়ি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে হয়। স্কুলে যাতায়াত করতে গিয়ে আমাদের চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে।’’
আরেক পরীক্ষার্থী শুভজিৎ মণ্ডল। সে বলে, ‘‘স্কুল হোক আর অন্য কোথাও, সময়মতো কাঁটাতারের গেট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সীমান্তের নিয়মকানুন মেনেই স্কুল, পড়াশোনা চালাতে হয় আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েদের। না হলে বিএসএফের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।’’
গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রাজু মণ্ডল জানাচ্ছেন, কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়েও চরমেঘনা গ্রামের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে, এটাই অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। এবারে মোট পাঁচ জন পড়ুয়া মাধ্যমিক দেবে।
তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ভীষণ গর্ব অনুভব করছি। আগে এমনও হয়েছে যে, গ্রাম থেকে কেউ মাধ্যমিক দেওয়ার মতো থাকত না। তবে সময় বদলেছে। এখন প্রতি বছরই তিন-চার জন পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy