Advertisement
০৭ মে ২০২৪

শিশুখুনে নয়া মোড়, ধৃত মৃতের বাবা-পিসি

সপ্তাহ দু’য়েক আগের কথা। নিজের দু’মাস তিনদিনের শিশুকন্যাকে কুয়োয় ফেলে মারার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল মা ঝুমা মোহান্ত। স্ত্রীর বিরুদ্ধে মেয়েকে কুয়োয় ফেলে খুন করার অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়ের করেছিলেন স্বামী লক্ষীনারায়ন মোহান্ত। ঝুমা দেবী নাকি পুলিশের কাছে খুনের কথা স্বীকারও করেছিলেন। অভিযুক্ত ঝুমাদেবী আপাতত জেল হাজতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৬
Share: Save:

সপ্তাহ দু’য়েক আগের কথা। নিজের দু’মাস তিনদিনের শিশুকন্যাকে কুয়োয় ফেলে মারার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল মা ঝুমা মোহান্ত। স্ত্রীর বিরুদ্ধে মেয়েকে কুয়োয় ফেলে খুন করার অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়ের করেছিলেন স্বামী লক্ষীনারায়ন মোহান্ত।

ঝুমা দেবী নাকি পুলিশের কাছে খুনের কথা স্বীকারও করেছিলেন। অভিযুক্ত ঝুমাদেবী আপাতত জেল হাজতে।

ঘটনার আকস্মিকতায় সেদিন চমকে উঠছিল চৈতন্যধাম। লোকের মুখে মুখে ঘুরছিল একটাই প্রশ্ন— একজন মা কেন নিজের দুধের শিশুর জীবন এ ভাবে শেষ করে দিলেন? পাড়ার গুঞ্জন কিন্তু অন্য কথা বলছিল। প্রশ্ন উঠেছিল আর কেউ গ্রেফতার নয় কেন? পুলিশের বাঁধাধরা উত্তর ছিল, ‘তদন্ত চলছে’।

সেই তদন্তে শেষ পর্যন্ত কেঁচো খুড়তে বেড়িয়ে এসেছে কেউটে। শনিবার পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই শিশুর বাবা লক্ষীনারায়ণ এবং তার বোন গোপা গোস্বামীকে। স্বামী পরিত্যক্তা গোপা দেবী বেশ কয়েকবছর ধরেই শ্বশুরবাড়ির পাট চুকিয়ে নবদ্বীপে বাপের বাড়িতে থাকছেন।

এবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ঝুমা দেবীর দিদি। ছোট বেলা থেকেই পিতৃমাতৃহীন ঝুমা দেবী তাঁর দিদি সোমা দাসের কাছে মানুষ। দমদমের বাসিন্দা সোমাদেবী পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী, ননদ এবং শাশুড়ির নির্মম অত্যাচারে কার্যত মানসিক রোগী হয়ে পড়েছিলেন তাঁর বোন ঝুমা।

আশ্চর্যের বিষয় হল, গত ১২ জুলাই ঘটে যাওয়া ঘটনার বিন্দুমাত্র সোমা দেবীকে জানানো হয়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ ঝুমা দেবীর সম্পর্কে খোঁজখবর করতে গিয়ে তাঁর দিদি সোমা দেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি পুলিশের কাছেই প্রথম সবকিছু শোনেন। ততদিনে ওই ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে।

এরপরে তিনি আর কাল বিলম্ব করেননি, শনিবার সকালেই তিনি নবদ্বীপ থানায় অভিয়োগ দায়ের করেছেন। সোমা দেবী জানান, বিয়ের পর থেকে নিয়মিত মারধর করা হত ঝুমাদেবীকে। সাত মাসের গর্ভবতী অবস্থায় তাঁকে এমন মারধর হয়েছিল যে, তাঁকে চেনা যাচ্ছিল না। যে কারণে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই তাঁর প্রসব হয়ে যায় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি স্বামী বা ননদের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হতে চান নি। পুলিশের অনুমান সেই মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেন নি ওই বধূ।

শহরের পুরনো মানুষজন পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রজানন্দ গোস্বামী রোডের বাড়িটিকে চিনতেন ‘নামযজ্ঞের বাড়ি’ নামে। বহুকাল আগে টানা ১২বছর ওই মন্দিরে অবিরাম নাম সংকীর্তন চলেছিল। সেই থেকে এমন নামকরণ।

লক্ষীনারায়ন মোহান্ত কলকাতায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী। এক সময় চিটফান্ডের এজেন্ট লক্ষীনারায়ন দীর্ঘদিন বাড়ি ছাড়া ছিল। বছরখানেক আগেই তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল দমদমের বাসিন্দা ঝুমা দেবীর। একই বাড়িতে থাকে ননদ গোপা গোস্বামী। কয়েকবছর আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে এসে বাপের বাড়িতেই দাপটের সঙ্গেই থাকত। বিরাট বাড়িতে ঝুমাদেবীর জন্য সেই বরাদ্দ করেছিল আলো-বাতাসহীন একটি ঘর। নবদ্বীপ থানায় সে পুলিশের সামনেই মারতে গিয়েছিল ঝুমাকে।

বউমাকে নিয়ে তাঁরা যে খুশি ছিলেন না সে কথা গোপন করেন নি ৮২ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ি আরতি দেবী। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ঝুমা দেবীকে চরম শারীরিক নিগ্রহ করা হত। আশপাশের বাড়ির বাসিন্দারা জানিয়েছেন কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় নাকি খুশি হয়নি পরিবারের কেউই।

প্রতিবেশীদের প্রশ্ন, পরিকল্পনা করে বাড়ির বউ আর সন্তানকে সরানো ফন্দি করেনি তো মোহান্ত পরিবার?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrested Child daughter killed Nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE