প্রতীকী চিত্র।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে স্ত্রী নমিতা মণ্ডলের (৪০)। সেই খবর পাওয়ার পরেই চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিলেন স্বামী ভীম মণ্ডলও (৪০)। সোমবার নশিপুরের ঘটনা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সতেরো বছর আগে চুনাখালির বাসিন্দা নমিতার সঙ্গে লালবাগের রনসাগারের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রি ভীম মণ্ডলের বিয়ে হয়। তাঁদের ১৬ বছরের ছেলে ও ১৪ বছরের মেয়ে রয়েছে।
অভিযোগ, ভীম মাঝেমধ্যেই মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরতেন। এটা একদমই পছন্দ করতেন না নমিতা। রবিবার নমিতার দাদার ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে চুনাখালিতে নিমন্ত্রণ ছিল সকলের। সেখানে যাওয়ার জন্য দুপুরে উপহারও কিনে আনেন ভীম। তার পরে বিকেলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান ভীম। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরেন তিনি। বাড়ি ফিরে নমিতা নিয়ে তিনি অনুষ্ঠান বাড়ি যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন।
আরও পড়ুন: সুপাত্র চাই, মায়ের জন্য ‘পোস্ট’ ছেলের
সেই সময় ভীম ও নমিতার কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরে চরমে ওঠে বিবাদ। রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাড়িতে কেউই ছিলেন না। ছেলে মেয়ে ওই সময় টিউশন নিতে গিয়েছিল। অভিযোগ, ওই সময় রাগের মাথায় নমিতার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন ভীম।
পরে ভীম ও স্থানীয় লোকজন নমিতাকে উদ্ধার করে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় নমিতার। নমিতার মৃত্যু হয়েছে— এই খবর শোনার পরেই নশিপুর সংলগ্ন কলাবাগান এলাকায় সকাল ১০টা নাগাদ ৫৩১৭৮ ডাউন লালগোলা শিয়ালদহ প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন ভীম।
আরও পড়ুন: এনআরসি তথ্য জোগাড়ে উত্তরবঙ্গে হুগলির দম্পতি
বহরমপুর জিআরপি থানার ওসি শুভেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ মেলেনি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, পারিবারিক অশান্তির জেরে স্ত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন ওই ব্যক্তি। এ দিন সকালে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন ওই ব্যক্তি। বাকি ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
এ দিন ভীম মণ্ডলের মামা গঙ্গাধর মণ্ডল বলছেন, ‘‘ওদের মধ্যে তেমন কোনও অশান্তি ছিল না। তবে মাঝেমধ্যে ভীম মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরত। সেটা নমিতা ভাল ভাবে নিত না। এই নিয়ে ঝামেলা হত। কিন্তু এই ঝামেলার জন্য যে এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে তা আমরা কেউই ভাবতে পারছি না।’’ ঘটনার পরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে লালবাগের রনসাগরে।
স্থানীয় বাসিন্দা খগেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলছেন, ‘‘ভীম মাঝেমধ্যে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরত। এটা নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর ঝামেলা হত। কিন্তু তার জন্য ওরা যে এমন করে বসবে, তা কে ভেবেছিল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy