ভিন্রাজ্যে কাজে গিয়ে বাংলা বলায় ‘হেনস্থার শিকার’ হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিক। সেখান থেকে কোনও ক্রমে বাড়ি ফিরেই রহস্যমৃত্যু! রবিবার ওই শ্রমিকের শোওয়ার ঘর থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে দেহ।
ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত রামকান্তপুর এলাকার প্রায় ১৩ জন শ্রমিক তামিলনাড়ুতে কাজ করতে যান মাসখানেক আগে। তাঁদেরই একজন বছর চব্বিশের ওয়াহিদ শেখ। সম্প্রতি সেখানে তাঁরা আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত শ্রমিক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘‘১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আমরা ঘরে ছিলাম। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আচমকা গাড়ির আওয়াজ শুনতে পাই। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি একটা চারচাকা গাড়ি ও বাস থেকে ৩০-৩৫ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের রুমের দিকে ছুটে আসছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যাই। তার পর আমাদের রুমে এসে একাধিক প্রশ্ন করে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলা বলে। তার পরেই তারা আমাদের উপর চড়াও হয়। লাঠি দিয়ে আমাদের মারতে থাকে। আমরা প্রাণের ভয়ে যে যে দিকে পেরেছি, ছুটে পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাই। আমি কাদা পেরিয়ে জঙ্গলের ভিতর গিয়ে কোনও রকম প্রাণ বাঁচাই। সকাল হতেই তিরুভাল্লুর পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করি সাহায্যের জন্য। কিন্তু ফোন বেজে যায়, কেউ রিসিভ করেনি। বাধ্য হয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে আমাদের উপর হামলার কথা জানাই।’’
এই দলে ছিলেন ওয়াহিদ। তিনি এই ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এরপর টাকা ধার করে ট্রেনের টিকিট কাটেন। বাড়ি ফেরা ঠিক দুদিন পরে নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয় ওয়াহিদের। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হেনস্থার অভিযোগে তামিলনাড়ুর পেনালুরপেট থানার পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে খবর।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রসপ্রীত সিংহ বলেন, ‘‘পেনালুরপেট থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। কী কারণে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর এই হামলা, তা তদন্ত করে দেখছে তামিলনাড়ুর পুলিশ।”