ট্রেন থামলে এ ভাবেই লাইনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল দেবজ্যোতি। —নিজস্ব চিত্র।
খুব যে ভিড় ছিল ট্রেনে তা নয়। প্রতি দিনের মতো ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়েছে। সকালের জঙ্গিপুর স্টেশন তখনও আড়মোড়া ভাঙছে. এরই মধ্যে প্রবল চিৎকার, হইচই, ছোটাছুটি। ভিড়টা একটা কামরার দিকে ছুটছে।
দৃশ্যটা চোখে পড়ল তখনই। আর ট্রেনের কামরার সিড়িতে পা আটকে পড়ে গিয়েছেন এক যুবক। মুখ তার নিচের দিকে, লাইন-মুখো। সেই অবস্থায় তাঁকে ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ট্রেনটি।
সহযাত্রীরা জানাচ্ছেন, বেশ আস্তেই চলছিল ট্রেনটা। পা পস্কে কী করে যে পড়ে গেলেন তা তাঁরা আংচই করতে পারেননি।
জঙ্গিপুরে কাজের খোঁজে যাচ্ছিলেন দেবজ্যোতি উপাধ্যায় নামে বছর তেইশের ওই যুবক। ট্রেনের পা দানি থেকে পড়ে আপাতত তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় পাঠানো হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে।
সমশেরগঞ্জের নিমতিতা জমিদার বাড়িতে বাবা অচিন উপাধ্যায় ছিলেন কুল পুরোহিত। বছর চারেক আগে তার মৃত্যুর পর এক মাত্র ছেলে দেবজ্যোতি জমিদার বাড়িতেই পুজো আচ্চা করে কোনওরকমে দিন চালাচ্ছিলেন। কিন্তু মা ও ছেলের সংসার তাতে চলছিল না। তাই কাজের খোঁজে সোমবার জঙ্গিপুর স্টেশনে নেমে যাওয়ার কথা ছিল পাশেই তালাই মোড়ে মন্ত্রী জাকির হোসেনের চালের মিলে। পকেটে ছিল কম্পিউটার পাশ ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশের বায়ডেটা লেখা আবেদন পত্রও।
ট্রেনথেকে নামা ওঠার পথে এই দুর্ঘটনা প্রথম নয়। বছর তিনেক আগেও মালদহ থেকে ডিহিগ্রামে বাড়ি ফিরছিলেন এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। নিমতিতা স্টেশনে একই ভাবে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন তিনি। গত বছর চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে সুজনিপাড়া স্টেশনে মারা যান বছর ৫৫ বয়সের এক বৃদ্ধা।
সোমবার কলকাতাগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের ওই কামরায় ছিলেন রাজীব ঘোষ। মালদহ থেকে খাগড়া যাবেন বলে উঠেছিলেন। তিনি বলেন, “নিমতিতায় ট্রেনে ওঠার পর থেকেই ওই যুবক দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বসার আসন ফাঁকা ছিল না । পিঠে স্কুল ব্যাগ। জঙ্গিপুর রোড স্টেশনে আমি জানালার পাশের সিটে বসে বসে দেখছি, চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়েই আছড়ে পড়ল যুবকটি। তার পরেই শরীরটা বেঁতকে চুড়ে ঢুকে গেল লাইনের দিকে।’’ ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মের ফাঁকে আটকে যাওয়া শরীরটা প্রায় ৬০ ফুট টেনে নিয়ে গিয়ে ট্রেন যখন দাঁড়াল তখন প্ল্যাটফর্ম জুড়ে হইচই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy