ভোটার কার্ডেও তিনি সি পি এম। নিজস্ব চিত্র।
বাম আমলে দাপট তাঁর কম ছিল না। পাড়ার ঝুটঝামেলা থেকে দু’বাড়ির হাতাহাতি— সামনে এসে দাঁড়ালেই নিমেষে থম মেরে যেত। শখ করে গ্রামের চৌমাথায় যে পাকুড় গাছটা নিজে হাতে লাগিয়েছিলেন, পনেরো বছরে তার ঘন ছায়া ছড়িয়েছে বেশ, লোকে বলে, ‘সিপিএমের গাছতলা!’
ভরা তৃণমূলের হাওয়ায় বুক পেতে সামাল দিয়ে কেদারচাঁদপুরের সিপিএম শেখ তাঁর হারানো নাম ইয়ারবিন নিয়ে তেমন খোঁজই রাখেননি এ যাবৎ, ভাবখানা, ‘নামে কি বা এসে যায়।’ সময়ের ধুলোয় আবছা হয়ে আসা বাপ-ঠাকুর্দার দেওয়া ইয়ারবিন শেখ তাই ভোটার কার্ডে দিব্যি শেকড় গেড়ে বসেছিলেন সিপিএম শেখ হয়েই।
তা নিয়ে তেমন মাথাব্যথা ছিল না তাঁর। ভরা বাম আমলে ওই নামটুকুর জোরেই এলাকায় দিব্যি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। গোল বাধাল হালের এনআরসি’র ছায়া! সিপিএম এখন মরিয়া হয়ে পুরনো নামে ফিরতে চাইছেন, জনে জনে অনর্গল তাঁর প্রশ্ন, ‘ও চাচা কী করি বল তো!’
এলাকার সকলেই, বছর চল্লিশের আটপৌরে দিনমজুর ইয়ারবিনকে ওই সিপিএম নামেই চেনেন। তাঁর ভোটার আর রেশন কার্ডেও গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘সি পি এম শেখ’। তিন মেয়ের জন্ম-শংসাপত্রে পিতার নামের জায়গায় স্পষ্ট হরফে লেখা সিপিএম শেখ। এমনকি স্ত্রী তাজিনা বিবির ভোটার এবং রেশন কার্ডে স্বামীর নাম, ওই সিপিএম শেখ। শুধু নিজের আধার কার্ডে পুরনো ইয়ারবিন ফিরে এসেছে। ব্যঙ্কের পাশবইও বলছে এ তো ইয়ারবিন। দুই নামের এই ঠোকাঠুকিতেই সমস্যা পেকে উঠেছে।
সিপিএম তাই দিনে ছুটছেন কম্পিউটার সেন্টারে, দুপুরে বিডিও অফিস আর বিকেল ফুরানোর আগে রেশন কার্ডের তদ্বির করতে খাদ্য সরবরাহ দফতরে!
সিপিএম এর মা আরজিয়া বিবি বলছেন, ‘‘দুই মেয়ে আর ছয় ছেলের মধ্যে ইয়ারনবিনই তো বড়। শখ করে ওর আব্বা নাম রেখেছিল ইয়ারবিন। কিন্তু যে বার ও জন্মাল, সেই বছর ভোটে জিতে ইয়ারবিনের জ্যাঠা আনার আলি কেদারচাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএমের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পাড়ার লোক সেই থেকেই ওকে সিপিএম বলেই ডাকত। ডাকনামটা আর বদলায়নি।’’
সিপিএমের বাবা জালালুদ্দিন বলছেন, ‘‘শুনেছি এনআরসি হবে। তখন আমরা এখানে থাকব, আর ছেলে থাকবে অন্যত্র? তাই যেমন করে হোক নামটা বদলাতেই হবে ওর!’’
প্লাস্টিকের ব্যাগে সমস্ত নথি ভরে হপ্তা খানেক ধরে সিপিএম তাই একটাই আর্জি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন— ‘বদলে দেন গো নামটা!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy