Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

কৃষ্ণনগর উইমেন্সে অধ্যক্ষ মানবী, খুশি ছাত্রীরা

কাঠফাটা রোদে গোটা কলেজটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি তিনি কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন। সম্প্রতি মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ গেটে তখন গুটিকয়েক ছাত্রীর জটলা। নতুন অধ্যক্ষকে নিয়ে তাঁদের নানা কৌতুহল। সেই সঙ্গে তারা উচ্ছ্বসিতও বটে। বিতর্কিত ব্যক্তিত্ত্ব এই নতুন অধ্যক্ষকে কী ভাবে দেখছেন তাঁরা?

কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০১:১০
Share: Save:

কাঠফাটা রোদে গোটা কলেজটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি তিনি কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন। সম্প্রতি মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ গেটে তখন গুটিকয়েক ছাত্রীর জটলা। নতুন অধ্যক্ষকে নিয়ে তাঁদের নানা কৌতুহল। সেই সঙ্গে তারা উচ্ছ্বসিতও বটে। বিতর্কিত ব্যক্তিত্ত্ব এই নতুন অধ্যক্ষকে কী ভাবে দেখছেন তাঁরা?

কোনও রাখঢাক না করেই ওই ছাত্রীরা সমস্বরে জানালেন, ‘‘আমরা চাই এ কলেজের পঠনপাঠনে উন্নতি হোক। আর সেটা যিনি করতে পারবেন তিনিই আমাদের কাছে গ্রহণীয়। তিনি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব কি না তা আমাদের কাছে বিবেচ্য নয়।’’ তাহলে প্রথম দিন নতুন অধ্যক্ষকে নিয়ে এত উচ্ছ্বাস কেন? তৃতীয় বর্ষের অনিন্দিতা পাল বলেন, ‘‘আমাদের সমাজ মেয়েদের নানা নিষেধের বেড়াজালে আটকে রাখে। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি যে ভাবে চরম প্রতিকূলতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সেটা আমাদের কাছ আদর্শ হওয়া উচিত। তাই ওঁর সঙ্গ আমাদের কাছে বাড়তি পাওনা বলতে পারেন।’’

২০১২ সালে অধ্যক্ষ ছন্দা শুক্লা হাজরা বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে কোনও স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকারাই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দায়িত্ব পেয়ে মানবীদেবী মঙ্গলবার কলেজে এলেও তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি। তিনি কলেজে এসেছিলেন পরিস্থিতি বুঝতে ও শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ সেরে নিতে। কলেজে ছুটি পড়ে যাওয়ার জন্য হাতেগো‌না কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাকর্মীরাও। তবে কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ আচমকা তিনি কলেজে হাজির হন। টিচার্স রুমে বসে তিনি সকলের সঙ্গে পরিচয় করেন। খবর পেয়ে চলে আসেন টিচার ইন চার্জ শিক্ষিকা বুলু মোদক। তাঁর ঘরে বসে তিনি কলেজের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। কলেজের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখার পরে তিনি চলে যান ছাত্রী আবাসনে। সেখানে তিনি ছাত্রীদের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। ঘন্টা তিনেক উপস্থিতিতেই মানবীদেবী বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, গুছিয়ে কাজ করতেই তিনি আসছেন। তাঁকে নিয়ে সমাজে যতই সামালোচনার ঝড় বয়ে যাক না কেন কর্মক্ষেত্রে তার কোনও আঁচ তিনি লাগতে দেবেন না। বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, কী ভাবে প্রথম দর্শনেই ব্যক্তিত্ত্ব আর আন্তরিকতা দিয়ে জয় করে নিতে হয় সহকর্মীদের হৃদয়। আস্থা অর্জন করে নিতে হয় ছাত্রীদের। এ দিন তিনি আবাসন ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই আবাসিক ছাত্রীরা বলছিলেন, ‘‘এর আগে এ ভাবে কেউ আমাদের সমস্যার কথা জনতে চাননি। আমরাও খোলামেলা ভাবে কাউকে নিজেদের সমস্যার কথা নির্ভয়ে বলতে পারিনি। আশা করছি, এ বার পাল্টে যাবে।’’

কলেজের এক শিক্ষাকর্মী প্রাঞ্জলী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানবীদেবী এই কলেজে আসায় আমরা খুব খুশি। উনি নারী সমাজের আদর্শ। এ বার আমরা ওঁকে দেখে শিখতে পারব কী ভাবে সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জিততে হয়।’’ তবে তাঁর জীবন নিয়ে সমাজে যে ন‌ানা বিতর্ক সেটাকে কোনও ভাবেই গুরুত্ব দিতে রাজি নন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক সঞ্জীব মাজি বলেন, ‘‘আমরা চাই পঠনপাঠনের উন্নতি। সেটা যিনি করতে পারবেন তিনিই স্বাগত। এর বাইরে আমাদের আর কিছু জানার প্রয়োজন থাকে না। এ সব নিয়ে ভাবতে রাজিও নই।’’

মানবীদেবীর সঙ্গে ঘণ্টা খানেক সময় কাটানোর পর উচ্ছ্বসিত বুলুদেবী বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, উনি কাজ করতেই এসেছেন। আমরাও তাঁকে সবরকম সহযোগিতা করব।’’ কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত উৎসাহ, এত কৌতুহল তিনি কী ভাবছেন? জীবন যুদ্ধে পোড় খাওয়া মানুষটা কিন্তু এখানেও মেপে পা ফেললেন। বললেন, ‘‘প্রথম প্রথম সব জায়গাই তো ভাল লাগে। এত দিন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এ বার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটাও একটা নতুন অভিজ্ঞতা। আশা করি সকলেই সহযোগিতা করবেন।’’ কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই কলেজের জন্য এমন একজনের দরকার ছিল যিনি কড়া হাতে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আমাদের বিশ্বাস মানবীদেবী সেটা পারবেন। কলেজ পরিচালনার জন্য আমি সব রকম ভাবে ওঁর পাশে থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE