Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ইয়ে, আপনাদের ঠিক চিনতে পারলাম না...

বিয়েবাড়ির বৌভাত সে দিন। খাবার ঘরের পশ্চিম দিকের একদম কোণের টেবিলটায় বসে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেবি নান আর চিলি পনির খাচ্ছিলেন ওঁরা।

অঙ্কন: কুনাল বর্মণ

অঙ্কন: কুনাল বর্মণ

সুদীপ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৪
Share: Save:

মাংসটা আর খাওয়া হল না। পাবদা-পাতেই ধরা পড়লেন ওঁরা।

বিয়েবাড়ির বৌভাত সে দিন। খাবার ঘরের পশ্চিম দিকের একদম কোণের টেবিলটায় বসে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেবি নান আর চিলি পনির খাচ্ছিলেন ওঁরা।

এর মাঝেই ওয়েটার এক হাতা গরম ধোঁয়া ওঠা বাঁশকাঠি চালের ভাত দিয়ে যান পাতে। সেটায় সযত্নে হাত বুলিয়ে একটা বাটির আকৃতি দিয়ে, তার মাঝে মাছের ঝাল রাখার জায়গা করেন মাঝবয়সী ভদ্রলোক। এর পরে একটা প্রমাণ সাইজের পাবদা এসে পড়ে সেই ভাতের মাঝের গর্তে।

এ পর্যন্ত তো সব ঠিকই ছিল। গোল বাধল ঠিক তার পরেই।

‘ঠিকঠাক করে খাবেন’—বলার জন্য বরের মা হাত ধরে টানতে টানতে বরকে নিয়ে আসেন খাওয়ার ঘরে। বরও বাধ্য ছেলের মতো হাসি মুখে সবাইকে বলতে বলতে এসে পৌঁছন সেই টেবিলের সামনে।

আর তার পরেই সব শেষ।

মায়ের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ছেলের প্রশ্ন—‘‘এঁরা কারা মা? আমার তো পরিচিত নন। তোমার কেউ?’’

মা-ও ঠিক চিনতে পারেন না অতিথিদের। এ দিকে ওই তিন জন হাসিমুখে বরের মুখের দিকে তাকিয়ে বিনা প্রশ্নেই উত্তর দিলেন— ‘‘হ্যাঁ বাবা, রান্না খুব ভাল হয়েছে। খুব ভাল করে খাচ্ছি।’’

একটু উসখুস করে বর বলেই ফেলেন— ‘‘ইয়ে, আপনাদের ঠিক চিনতে পারলাম না যে...।’’

একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে তিন জনের মধ্যে বয়সে যিনি প্রবীণ, তিনিই উত্তরটা দেন— ‘‘ও হো, আমরা প্রমথবাবুর পরিচিত।’’

প্রমথবাবু পাড়ারই মানুষ। কিন্তু এ বাড়ির বিয়ের নিমন্ত্রিতের সঙ্গে পাড়ার মানুষটির পরিচয়ের কী সম্পর্ক, বুঝতে না পেরে ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে বর।

ব্যপার দেখে বরের দুই বন্ধু এসে ওই তিন জনকে উঠে যেতে বলেন। তাঁরা মনে হয়, এতেই অভ্যস্ত। উঠে যাওয়ার কথা শোনা মাত্র মাথা নিচু করে বেরিয়ে যান খাবারঘর থেকে।

ওই বিয়েতে সে দিন কেটারিংয়ের দায়িত্ব ছিলেন দেবকুমার বসাক। বিরক্তি মুখে দেব বলেন, ‘‘এই এক সমস্যা। প্রতি বিয়েতেই এ রকম দশ-পনেরো জন ঢুকে পড়েন। কেউ আসেন অভাবে আর কেউ স্বভাবে!’’

তাঁর কাছেই জানা গেল, শহরে এমন কিছু পরিচিত মুখ আছে। যাঁরা প্রতি অনুষ্ঠান বাড়িতে বিনা নিমন্ত্রণে চলে যান। এঁদের মধ্যে কিছু গরিব মানুষ, রিকশাচালক, টোটো চালক যেমন আছেন, তেমন সচ্ছল পরিবারের মানুষ আছেন। অনেক সময় খেতে বলে ধরা পড়েছেন। বের করে দেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে। তার পরেও অভ্যাস বদলায়নি।

এই তো সে দিন সদর হসপিটালের পিছনে এক লজে খেতে ঢুকে ধরা পড়েন এক মহিলা। দেখে বোঝার উপায়ই নেই। কিন্তু ধরা পড়ার পর পরিচয় জানতে চাওয়ায় আমতা আমতা করে বললেন, ‘‘আমি হসপিটালের স্টাফ।’’

জানা গেল, ধরা পড়লে কেউ মাইকের লোক, কেউ আবার বরযাত্রী বা কনেযাত্রীর বাসের লোক বলে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন নিজেকে। এ ছাড়া মাইক ম্যানের বা ক্যামেরাম্যানের লোক বলে পরিচয় দেওয়া তো আছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Invitation Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE