Advertisement
E-Paper

একই দিনে বন্ধ পাঁচ মেয়ের বিয়ে

চার জন হাত তুলে জানায়, স্থানীয় সোমপাড়া এলাকায় চার জনের বিয়ে হচ্ছে। তখনই তাদের বিস্তারিত খোঁজ নিতে বলা হয়েছিল। পরে আরও একটি নাবালিকার বিয়ের খোঁজ মেলে। মঙ্গলবার শক্তিপুরে ওই পাঁচটি নাবালিকা বিয়ে রুখে দিল কন্যাশ্রীরা।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ১৩:১০

বেলডাঙা ২ ব্লক অফিসে ৫০ জন কন্যাশ্রীযোদ্ধার প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির মেয়েদের জিগ্যেস করা হয়েছিল— তোমাদের মধ্যে কাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে? আমরা নিমন্ত্রন পাব তো? কন্যাশ্রীরা জানায়, তারা কেউ বিয়ে করছে না।

১৫ জুলাই ওই সভায় পরের প্রশ্ন ছিল— তোমরা কতগুলো নাবালিকা বিয়ের কথা জানো?

চার জন হাত তুলে জানায়, স্থানীয় সোমপাড়া এলাকায় চার জনের বিয়ে হচ্ছে। তখনই তাদের বিস্তারিত খোঁজ নিতে বলা হয়েছিল। পরে আরও একটি নাবালিকার বিয়ের খোঁজ মেলে। মঙ্গলবার শক্তিপুরে ওই পাঁচটি নাবালিকা বিয়ে রুখে দিল কন্যাশ্রীরা।

প্রথমটা সহজ ছিল না।

দুপুরে শক্তিপুরের কামনগর গ্রামে অর্জুন ঘোষের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় মেয়ের দল, সঙ্গে পুলিশ— কে আছেন বাড়িতে? কোনও সাড়া নেই। বহু ডাকাডাকির পরে বাইরে বেরিয়ে আসে কামনগর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী পূজা ঘোষ। সে বলে, ‘‘পুলিশের গাড়ি দেখে সকলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।’’

কন্যাশ্রীরা বলে, তাদের কথা শুনলে পুলিশ কাউকেই ধরবে না। দেড় ঘণ্টা বাদে একে-একে বাড়ির সব লোকজনই ফিরে আসেন। তাঁদের কম বয়সে বিয়ের কুফল বোঝানো হয়। পরে পূজার মা বন্দনা ঘোষ বলেন, ‘‘আগামী ২৪ শে শ্রাবণ পাশের দোপুকুরিয়া গ্রামে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু কন্যাশ্রীদের কথা শুনে মনে হল, আমরা ভুল করেছি। আমি লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছি, ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেব না।’’

পরের চারটি বিয়েই সোমপাড়া গ্রামে এবং সেগুলি রুখতে গিয়ে তেমন বেগ পেতে হয়নি। ওই গ্রামের সুখেন দাস তাঁর অষ্টম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে শম্পার বিয়ে দিচ্ছিলেন পাশের তিলিপাড়া গ্রামে। ফিতাজ শেখ তাঁর নবম শ্রেণিকে পড়া মেয়ে নারসিদার বিয়ে দিচ্ছিলেন কাজিপাড়া গ্রামে। ওই গাঁয়েরই খোকন দাস নবম শ্রেণিতে পড়া রাধারানি দাসের বিয়ে দিচ্ছিলেন তালবেড়িয়া গ্রামে। আশাবুল শেখ তাঁর অষ্টম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে রকিয়া খাতুনের বিয়ে দিচ্ছিলেন পাশের কাদখালি গ্রামে। সকলেরই বিয়ে ঠিক হয়েছিল এই শ্রাবণে।

কন্যাশ্রী সুমি খাতুন ও ইন্দ্রা খাতুন বলে, ‘‘এরা সকলেই বলছে, আমরা গরিব। কেনাকাটা সারা। সোনার গয়না তৈরি। সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। বিয়ে ভাঙলে আর বিয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু কেউ ভাবছে না, বিয়ে হলে আরও ক্ষতি। মেয়ের শরীর ভাঙবে। সন্তান প্রসবের সময়ে রক্তশূন্যতায় মেয়ের মৃত্যুও হতে পারে।’’

বিডিও সমীররঞ্জন মান্না বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ শিবিরেই কন্যাশ্রী মেয়েরা সব কথা বলেছিল। এর আগেও ওরা বিয়ে রুখেছে। তবে এ বার এক সঙ্গে পাঁচটা। বেশ ভাল লাগছে।’’

Marriage Minor Girl Kanyashree কন্যাশ্রী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy