Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কান্না গিলে মাধ্যমিক দিচ্ছেন অনিঞ্জিতা

মঙ্গলবার কাশীপুর তারিণীসুন্দরী বিদ্যাপীঠ থেকে ইংরেজি পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে অনিঞ্জিতা বলছেন, ‘‘পরীক্ষায় বসার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না। কিন্তু স্বামীর কথা রাখতে ও পরিবারের সকলের সহযোগিতায় আমি পরীক্ষা দিচ্ছি।”

পরীক্ষাকেন্দ্রে অনিঞ্জিতা।

পরীক্ষাকেন্দ্রে অনিঞ্জিতা।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায় ও কল্লোল প্রামাণিক
রেজিনগর ও করিমপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০২:১২
Share: Save:

কেঁদে কেঁদে সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। খাওয়া নেই, ঘুম নেই। কারও সঙ্গে রা পর্যন্ত কাড়েননি।

সেই মেয়ে কী করে মাধ্যমিকে বসবে? পরিবারের সকলেই ধরে নিয়েছিলেন, এ বছর বুঝি পরীক্ষা দেওয়া হল না মেয়েটির। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় চোখের জল মুছে অনিঞ্জিতা মণ্ডল নিজেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘পরীক্ষায় বসব। ও চেয়েছিল, আমি ভাল ভাবে পরীক্ষা দিই। ওর জন্যই পরীক্ষাটা দেব।’’

মঙ্গলবার কাশীপুর তারিণীসুন্দরী বিদ্যাপীঠ থেকে ইংরেজি পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে অনিঞ্জিতা বলছেন, ‘‘পরীক্ষায় বসার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না। কিন্তু স্বামীর কথা রাখতে ও পরিবারের সকলের সহযোগিতায় আমি পরীক্ষা দিচ্ছি।”

গত ৭ মার্চ রাতে চান্ডেল জেলায় খেংজোই ও বংজোই গ্রামের মাঝে সেনার ২৮ রাজপুত রেজিমেন্টের টহলদার বাহিনীকে লক্ষ করে ৩টি আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলেই মারা যান পলাশিপাড়ার পাঁচদাড়া গ্রামের অভিজিৎ মণ্ডল। সদ্য বিবাহিত অভিজিতের স্ত্রী অনিঞ্জিতা খবর পেয়েই বাবার বাড়ি সর্বাঙ্গপুর থেকে ছুটে আসে পাঁচদাড়ায়। গত ডিসেম্বরে অনিঞ্জিতার সঙ্গে বিয়ে হয় অভিজিতের। মাসখানেক বাড়িতে কাটিয়ে তিনি ফিরে যান মণিপুরে।

অনিঞ্জিতা সর্বাঙ্গপুর জনকল্যাণ সঙ্ঘ আদর্শ বিদ্যাপীঠ থেকে এ বারে মাধ্যমিক দিচ্ছে। পরীক্ষার আসন পড়েছে কাশিপুর তারিণীসুন্দরী বিদ্যাপীঠে। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যই স্বামী চলে যাওয়ার পরে অনিঞ্জিতা সর্বাঙ্গপুরে বাবার বাড়িতেই থাকত।

কথা ছিল, অভিজিৎ ফিরবেন অনিঞ্জিতার পরীক্ষার আগে। স্ত্রীকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। সেই মতো বাড়ি ফেরার টিকিটও কাটা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। স্ত্রীকে ফোন করেও তিনি জানিয়েছিলেন, সোমবার পরীক্ষার প্রথম দিনে খুব সকালেই তিনি বাড়ি ফিরবেন। অনিঞ্জিতা বলে, ‘‘সব কেমন ওলটপালট হয়ে গেল, দেখুন! আমাকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবে বলল। আর নিজেই এল কফিনবন্দি হয়ে। ও চাইত, আমি যেন ভাল ভাবে লেখাপড়াটা চালিয়ে যাই। ওকে আমি কথা দিয়েছিলাম। তাই যত কষ্টই হোক সেই কথা আমি রাখব।’’ অভিজিতের কাকা সনাতন মণ্ডল বলছেন, ‘‘বৌমা যে পরীক্ষা দিতে পারছে, এতে আমরা খুশি।’’

সর্বাঙ্গপুর জনকল্যাণ সঙ্ঘ আদর্শ বিদ্যাপীঠের ছাত্রী অনিঞ্জিতাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসছেন তাঁর কাকা শুভেন্দু বিশ্বাস। অনিঞ্জিতার স্কুলের শিক্ষক নীতিশ বিশ্বাস এ দিন বলছেন, ‘‘ওর মনের জোরকে কুর্নিশ। আমরা সবাই ওর পাশে আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aninjita Mondal Madhyamik Martyr Army
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE