Advertisement
E-Paper

হিংসায় আস্থা নেই সিংহভাগ সংখ্যালঘুর

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন বিভিন্ন জায়গায় হিংসাত্মক চেহারা নেওয়ায় জেলার সংখ্যালঘু সমাজের সিংহভাগই উদ্বিগ্ন।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৪
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে জ্বলল টায়ার। রবিবার চাপড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে জ্বলল টায়ার। রবিবার চাপড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন বিভিন্ন জায়গায় হিংসাত্মক চেহারা নেওয়ায় জেলার সংখ্যালঘু সমাজের সিংহভাগই উদ্বিগ্ন। তাঁরা দায়িত্বশীল, যথার্থ শুভ বোধসম্পন্ন মানুষ। এঁদের মধ্যে শিক্ষিত যুবক, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, সরকারি চাকুরিজীবী, ধর্মীয় নেতা—সকলেই রয়েছেন।

তাঁরা জানেন, সংযত অথচ শক্তিশালী আন্দোলনের প্রভাব তীব্র। তা যে কোনও সরকার বা প্রশাসনকে ভাবায়। তুলনায় এলোমেলো তাণ্ডব, হিংসাত্মক প্রতিবাদের স্থায়িত্ব স্বল্প, প্রভাব অকিঞ্চিৎকর। সর্বাত্মক সমর্থনের বদলে তার প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধা এবং বিরক্তি বাড়ে। আন্দোলন ফলপ্রসূ হয় না। সরকারও আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার বদলে তাঁদের দমনে প্রবৃত্ত হয়।

সংখ্যালঘুদের এই দায়িত্বশীল অংশের মতে, যে কোনও অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবেই। সর্বকালেই হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের পন্থা সঠিকভাবে ঠিক করতে হবে। ভারতবর্ষ গোটা বিশ্বকে অহিংসা, অসহযোগ ও সত্যাগ্রহের শক্তি চিনিয়েছে। এখন এ দেশের সংখ্যালঘুরা সে সব ভুলে গেলে চলবে না। তাঁদের আস্থা থাক অহিংসাতেই।

কৃষ্ণনগরে সর্ব ধর্মের লোকজনকে নিয়ে বছর পাঁচেক আগে তৈরি হয়েছিল ‘সংযোগ’ নামের একটি সংস্থা। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে তারা কাজ করে। সংস্থার অন্যতম কর্তা তথা জেলার প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সহ অধিকর্তা সারিকুল ইসলামের কথায়, ‘‘গ্রুপ-এ অফিসার হিসেবে সরকার তাঁকে পরিচয়পত্র দিয়েছে। এখন তাঁকে যদি নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হয় তা হলে সেটা বিস্ময়কর। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ১৮ ডিসেম্বর সংস্থার তরফে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাকও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কখনই হিংসাত্মক হবে না। সহিংস আন্দোলনে আখেরে বিভেদকামী শক্তিরই লাভ হবে। সেটা হতে দেওয়া যাবে না।’’

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক মুসিয়ার আলি আবার মনে করছেন, ‘‘কোনও আন্দোলন একটা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে করলে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আন্দোলনের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মুসলিমদের এই আন্দোলন করতে হবে সর্ব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই। কারণ, ভারতের বহু মানুষই চরিত্রগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ। অমুসলিমরাও এই আন্দোলনে নিশ্চয় সামিল হবেন। কোনও কোনও জায়গায় ইতিমধ্যে হয়েছেন। মুসলিমদের এই আন্দোলনের ব্যাপারে সংযত হতেই হবে।’’

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক শুভদীপ দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘আমি খোলাখুলি বলছি, এই আইন বিভেদমূলক। কিন্তু শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। তাতে আমিও অংশ নেব।’’ একই ভাবে ধুবুলিয়ার সিংহাটির মসজিদের ইমামও জানাচ্ছেন, এক সময় সাচার কমিটির রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল এ বাংলার মুসলিমরা মানবেতর জীবন যাপন করেন। তার পরেই মুসলিমেরা পথে নামেন। সেটা ছিল শান্তিপূর্ণ। অতীতে মুসলিমেরা দেখিয়েছেন যে,শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করাই যায়। নাগরিকত্ব আইনের ক্ষেত্রে সে ভাবেই আন্দোলন করতে হবে।

Minority Violent Protest Citizenship Amendment Act
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy