Advertisement
E-Paper

যেমন দাম, তেমন জিনিসই পাবেন কত্তা

শীতের মরসুমে রবি আর বুধবার ভোর পাঁচটা থেকে হাটে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। সাইকেল কিংবা মোটরভ্যানে হাঁড়ি বোঝাই গুড় নিয়ে কুড়ি বাইশ কিলোমিটার দূর থেকেও আসেন কারবারিরা। গেদে বার্নপুরের গুড় আসে ট্রেনে। হপ্তায় ওই দু’দিন হাট জমজমাট।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৪
তৈরি হচ্ছে গু়ড়। লালবাগে। ফাইল চিত্র

তৈরি হচ্ছে গু়ড়। লালবাগে। ফাইল চিত্র

যেমন গুড় ঢালা যাবে, তেমনটাই মিষ্টি হবে। কোনও জিনিসের গুণগত মান বোঝাতে এ কথাটা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু প্রশ্নটা যদি হয় গুড়ের গুণগত মানের? নদিয়া-মুর্শিদাবাদের খেজুর গুড়ের কারবারিরা বলছেন, ‘‘ওই একই ব্যাপার, কর্তা। যেমন দাম দেবেন, তেমনই খাঁটি জিনিস পাবেন।’’

নদিয়ায় মাজদিয়ার গুড়ের হাটের বেশ নামডাক আছে। এই হাটের খেজুরের গুড় পাড়ি দেয় দেশ-বিদেশে। শীতের মরসুমে রবি আর বুধবার ভোর পাঁচটা থেকে হাটে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। সাইকেল কিংবা মোটরভ্যানে হাঁড়ি বোঝাই গুড় নিয়ে কুড়ি বাইশ কিলোমিটার দূর থেকেও আসেন কারবারিরা। গেদে বার্নপুরের গুড় আসে ট্রেনে। হপ্তায় ওই দু’দিন হাট জমজমাট।

কার্তিক থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত গুড়ের হাটে রমরমা। কিন্তু কেমন দামে বিক্রি হচ্ছে গুড়? ৫৫-৬০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত হরেক রকমের গুড় মিলছে এই হাটে। গুড়ের কারবারিরা জানাচ্ছেন, গুড়ের কেজি গড়ে ৫৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা। সে দর মাঝেমধ্যে ওঠানামাও করে। তবে নদিয়ার অনুপম বিশ্বাস, শ্যামল বিশ্বাস বা গোপাল বিশ্বাসের মতো কারবারিদের থেকে গুড় নিলে তার দাম ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা প্রতি কেজি। তবে সে গুড় হাটে মেলা ভার। আগে থেকে বলেকয়ে তাঁদের ঘর থেকে নিতে হয়। আবার বাবলু রুদ্রের তৈরি গুড়ের কেজি ২০০ টাকা থেকে শুরু। তিনি বলছেন, “কেন হবে না বলুন তো? আমরা গুড়ের স্বাদগন্ধ আনতে চিনি বা গন্ধ কিছুই দিই না। কমপক্ষে আট লিটার খাঁটি রসে মাত্র এক কেজি গুড় হয়। এমন গুড়ের জন্য একটু বেশি টাকা তো ঢালতেই হবে!’’

এ বার শীতের শুরুতে ঠান্ডা তেমন জাঁকিয়ে পড়েনি। ফলে প্রথম দিকে সে ভাবে গুড় তৈরি করতে পারেননি নদিয়া-মুর্শিদাবাদের চাষিরা। বহরমপুরের গ্রান্টহল মোড়ে নিয়মিত গুড় বিক্রি করতে আসেন জলঙ্গির নাসিরুল শেখ। তিনি বলছেন, “কনকনে ঠান্ডা না পড়লে রস ভাল হয় না। আমার প্রায় একশো খেজুর গাছ রয়েছে। প্রথম দিকে রস সে ভাবে হচ্ছিল না। এখন ঠান্ডা পড়তেই রসের জোগানও বেড়েছে।” মুর্শিদাবাদে খেজুর গুড়ের পাটালির দাম কিলো প্রতি ৮০-১৫০ টাকা। খেজুরের ঝোলাগুড়ের দর কিলো ২০০ টাকা। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ, ঘাসিপুর, হুমাইপুর, লালবাগের খোশবাগ, পিরতলা, হরিহরপাড়া, জলঙ্গির সাগরপাড়া, দেবীপুর খেজুর গুড়ের জন্য পরিচিত এলাকা। লালবাগের খোশবাগ এলাকার এক গুড়ের কারিগর সুশান্ত সরকার বলছেন, ‘‘ডিসেম্বরে তেমন ঠান্ডা না পড়ায় রসের অভাবে গুড় তৈরি করতে পারিনি। এখন দেখা যাক, এই ঠান্ডা ক’দিন পড়ে।’’ খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি করা হচ্ছে বলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। তা কবুলও করছেন তাঁরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, নলেন গুড়ের চাহিদা যেমন বাড়ছে, জোগান তো তেমন নেই। ফলে নিরুপায় হয়েই একটু উনিশ-বিশ করতে হয়।

উদ্যানপালন দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা আধিকারিক গৌতম রায় বলেন, ‘‘আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে খেজুর গাছে চার বার ‘কাটিং’ করেন শিউলিরা। শীত পড়ার আগে গাছে প্রথম বার কাটিং করার পরে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়লে এক বার এবং তার পরে আরও দু’বার কাটিং করতে হয়। তা হলে রসের পরিমাণ ও গুণগত মান দু’টোই অনেক ভাল হয়।’’

molasses Mazdia Mazdia Market molasses market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy