ওষুধের বাজার: বহরমপুরের খাগড়ায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
মাথার ওপরে কুণ্ডুলী পাকানো তারের জাল। কোনটা কিসের বোঝায় দায়। নিচে পিচ বোর্ডের প্যাকেট ভর্তি ওষুধ। ঘিঞ্জি ও সরু গলির দু’ধারে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাইকেল, মোটরবাইক। পাইকারি হারে ওষুধের কেনাবেচা চলছে।
কিন্তু খাগড়ার সেই ওষুধ বাজারে যদি আগুন লাগে? ভাবলেই শিউড়ে উঠছেন দমকলের কর্মীরা। রাস্তা এতটাই সরু যে সে পথে দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতে পারবে না। সরু গলি, ভিড়ে ঠাসা সে বাজারে অগ্নি নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থাই নেই। কলকাতার বাগড়ি মার্কেটে একটা আস্ত রেপ্লিকা যেন!
বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মুর্শিদাবাদের সম্পাদক রবিউল ইসলাম সে বাজারের কথা উঠতেই বলছেন, ‘‘বাগরির আগুনের ঘটনা আমরা যত পড়ছি ততোই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।’’ তাঁদের দাবি, এ ব্যপারে প্রশাসনের কাছে আমাদের বার বার আবেদন করেছেন তাঁরা। বলেছেন, ওই তারের জঙ্গল একটু সাফ করার ব্যবস্থা করুন! তবে সাড়া তেমন মেলেনি।
নতুন বাজারের কাছে ডান দিকেই সরু গলিটিই ওষুধ মার্কেট। এই গলিতে সব সব মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো ওষুধের দোকান। তবে তাদের আলাদা করা বেশ মুস্কিল। একটি দোকান যেন অন্যটির গায়ে সেঁদিয়ে আছে। কোনও দোকান এতটাই গলির অন্দরে যে, সেই গলিতে হেঁটে ঢোকাও কঠিন।
বাজার জুড়ে কোনটা বিদ্যুতের তার, কোনটি ফোনের— বোঝার কোনও উপায় নেই। তারের জট এমনভাবে জড়িয়ে আছে, কোনও কারণে আগুন লাগলে নিমেষে গোটা বাজারে ছড়িয়ে পড়া মিনিট
কয়েকের ব্যাপার।
স্থানীয়রা জানান এই বাজারে মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি মালদহ, বীরভূম থেকে বহু ব্যবসায়ী পাইকারি ওষুধ কিনতে আসেন। সরু রাস্তার ওপরে দু’দিকে সাইকেল, মোটরবাইক রেখে সেঁদিয়ে যান বাজারে। ফলে চলাচলের রাস্তা ক্রমেই সরু হতে থাকে সকাল থেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময়ে সে পথে হেঁটে চলাচলই প্রায় অসম্ভভ হয়ে পড়ে। বাজারের দোকানিরা বলছেন, ‘‘তা হলে বুঝতে পারছেন, এই অগম্য পথে দমকল ঢুকবে কি করে!’’
বহরমপুরের ওই ওষুধ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য আমার দোকানে ফায়ার এক্সটিংগুইসার নেই। আগুন লাগলে দমকল আসার আগেই পুড়ে খাক হয়ে যাব।” অন্য এক জনের কথায়, ‘‘এত দিন পর্যন্ত আমাদের বাজারে আগুন লাগেনি। কিন্তু লাগলে কি হবে ভাবতেই ভয় লাগছে।’’
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন অবশ্য আশ্বস্থ করেছেন, “পুরসভা ও দমকলকে নিয়ে শহরের বাজারগুলির অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সংক্রান্ত একটা আলোচনা জরুরি হয়ে উঠেছে। আমি নিজেই বাজার ঘুরে দেখে এ নিয়ে আলোচনায় বসব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy