পঞ্চাশ বছর আগের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যার কথা আজও খুব মনে পড়ে সুবোধ প্রামাণিকের। নতুন পেশায় সদ্য হাতেখড়ি হয়েছে এক বালকের। চেষ্টা চালাচ্ছে সেই পেশায় সফল হতে। তখন দেশ তার উত্তাল। তবে সে সময়ে শেখা কাজে আজও পরিবার চালাচ্ছেন সে দিনের সেই বালক।
বেলডাঙার বাসিন্দা বছর একষট্টির সুবোধ চুল কাটার কাজ করছেন দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে। পড়শি দেশ বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন এককালে। সুবোধ বলেন, “সেই সময় বাংলাদেশের উত্তাল অবস্থা আমার আজও মনে আছে। পরে বাবার হাত ধরে ওপার থেকে এপারে আসি।’’
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে মুক্তিযুদ্ধ। পরে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়। সুবোধ প্রামাণিকের বাবা সন্তোষ প্রামাণিক সদর ঈশ্বরদী এলাকার একটি সেলুনে কাজ করতেন। কিন্তু যুদ্ধের জেরে মার্চের পর সেলুন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নিজের উদ্যোগে ছোলিমপুর এলাকায় বাজারের মধ্যে একটি টুল নিয়ে বসে অস্থায়ী সেলুন তৈরি করে কাজ শুরু করেন। তাঁর সঙ্গ নেয় ছোট্ট সুবোধ। বাবার কাছ থেকে পাঠ নেয় চুল-দাড়ি কাটার। সুবোধের কথায়, “সেই সময়ের শেখা পেশা আজও করে চলেছি। সব কাজ বাবার কাছে শেখা।’’
তিনি আরও বলেন, “ওই মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় আমার কাজ শেখা। তাই ওটা আমার চিরস্মরণীয় থাকবে।” যুদ্ধের সময়ের স্মৃতি আজও টাটকা তাঁর মনে। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবার মাসির বাড়ি ছিল আমাদের বাড়ি থেকে সাত-আট কিলোমিটার দূরে। সেখানে চৈত্র মাসের মেলা চলছিল। আমরা গিয়েছিলাম সেখানে মেলা দেখতে। দূরে বোমার শব্দ শুনেছি। খুব চঞ্চল সময়। পরিস্থিতি এমনই ছিল, সেখান থেকে প্রায় ১২ দিন অন্যত্র যাতায়াত করিনি। তারপর অন্য পথ ধরে আমার পিসির বাড়ি যাই। গ্রামের মেঠো পথ ধরে যাতায়াত করি এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে। তারপর কাকার সাইকেল চড়ে বাড়ি ফিরেছি।’’
মুক্তিযুদ্ধের অবসানে ১৬ ডিসেম্বর চারদিকে ছিল উৎসবের পরিবেশ। সুবোধ বলেন, ‘‘খুব আনন্দ হয়েছিল সেদিন। সকলেই খুব খুশি। সব জায়গায় একটা উৎবের মেজাজ ছিল।’’ তবে সেই যুদ্ধের দিনগুলিতে শেখা পেশাকে আজও আঁকড়ে ধরে এক অদ্ভুত আনন্দ ও স্বস্তি পান সুবোধ। তাঁর কথায়, ‘‘সে সময়ের অনেক বিখ্যাত মানুষের চুল-দাড়ি কেটেছি। যুদ্ধের স্মৃতির সঙ্গে সে সব স্মৃতি আজও অমলিন হয়ে রয়েছে।’’