কৃষ্ণনগরের সরভাজা। ফাইল চিত্র
শক্তিগড়ের ল্যাংচা বা বর্ধমানের মিহিদানা যদি ‘ব্র্যান্ড’ হতে পারে, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া আর সরভাজাই বা হবে না কেন? যার টানে কলকাতা থেকে উত্তরে পাহাড়ের দিকে যেতে-আসতে থমকে যায় বাসের চাকা? দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়ি?
আগেই ঠিক হয়েছিল, কৃষ্ণনগরে গড়ে তোলা হবে ‘মিষ্টি হাব’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধ করে যার নাম দিয়েছেন ‘সরতীর্থ’। তার জন্য এ বার প্রায় দু’কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর।
কোথায় হবে এই প্রকল্প? জমি রাজনীতির রাজ্যে তার ঠাঁই নিয়ে আবার ঘোঁট পাকবে না তো?
নদিয়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, কৃষ্ণনগরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পিডব্লিউডি মোড়ের কাছে সরকারের নিজের ৩১ শতক জমি আছে। সেখানেই গড়া হবে সরতীর্থ। অন্য কারও কাছ থেকে জমি নেওয়ার পরিকল্পনা না থাকায় গোলমালেরও সম্ভাবনা নেই। দোতলা বাড়িতে মোট ১৬টি স্টল হবে। থাকবে মিষ্টি তৈরির ঘর, এমনকী বিশ্রামের ঘরও। এখন জাতীয় সড়কের ধারে দোকানগুলিতে যেমন বসে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, সরতীর্থেও তা থাকবে।
সরপুরিয়া বা সরভাজা দীর্ঘদিন ধরেই কৃষ্ণনগরের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত। ষোড়শ শতকে কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে মহাপ্রভুর যে খাদ্যতালিকা রয়েছে, তাতেও সরপুরিয়া গোত্রের মিষ্টান্ন উপস্থিত। অর্থাৎ সরপুরিয়ার ইতিহাস অন্তত পাঁচশো বছরের। যে সে মিষ্টি নয়। দুধের সর, ক্ষীর, ছানা, চিনি, কাঠবাদাম, পেস্তা, ছোট এলাচ দিয়ে তৈরি হয় সরপুরিয়া। ক্ষীর আর সর দিয়ে হয় সরভাজা। তার স্বাদ-গন্ধ অতুলনীয়। যদিও জাতীয় সড়কের পাশে দূরপাল্লার বাস থামিয়ে লোকে যে সরপুরিয়া-সরভাজা খায়, সেটাই সব নয়। বরং কৃষ্ণনগর শহরের ভিতরে কয়েকটি পুরনো ও প্রসিদ্ধ দোকান রয়েছে। এঁরা সরতীর্থে স্টল পেলে কলকাতা-শিলিগুড়ি বাসের যাত্রীদের রসনা জুড়োবে। বাড়তি ব্যবসা হবে দোকানগুলিরও।
সরতীর্থে কারা স্টল পাবেন?
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত জানান, সরভাজা বা সরপুরিয়া তৈরির সঙ্গে যে কেউই স্টল পেতে পারেন। ফলে, খুশি মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও। নদিয়া জেলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ওয়েলেফেয়ার সমিতির সহ-সম্পাদক তাপস দাস বলেন, “সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগও ঘটবে।”
কাজ কত দূর এগিয়েছে? মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ডিসেম্বরেই কৃষ্ণনগরের মিষ্টিহাব গড়ার অনুমতি চেয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরে আবেদন করেছিল জেলা প্রশাসন। বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রাথমিক অনুমোদন মেলে। এ বারে টাকাও বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সরতীর্থের বাড়ি তৈরির জন্য কাউকে এখনও বরাত দেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যেহেতু রাজ্য থেকে এই প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল, তাই টাকা হাতে পাওয়ার আগেই জেলা প্রশাসন টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করছিল। কিন্তু প্রথম টেন্ডারে কোনও সংস্থাই আগ্রহ দেখায়নি। তাই ফের টেন্ডার ডাকা হয়েছে। আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে টেন্ডার জমা দেওয়া যাবে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘সরতীর্থের জন্য টাকা এসে গিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেই কাজ শুরু হবে।’’
শুধু কৃষ্ণনগর নয়। কবে সরতীর্থ চালু হয়, তার প্রতীক্ষায় রয়েছে কলকাতা থেকে দার্জিলিং।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy