Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

আবেগেই বল গড়ায় মাঠে

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। সদ্য সাঙ্গ হল ইদ-উল-ফিতর, রথযাত্রা। দুর্গা পুজো, ইদুজ্জোহার এখনও ঢের দেরি। তাহলে এই সময়ে কী হবে? সীমান্তের প্রত্যন্ত গাঁ থেকে জেলার সদর শহর সমস্বরে গর্জে উঠল— কেন, ফুটবল! ফুটবলের সেই উৎসবের খোঁজ নিতে মাঠে নামল আনন্দবাজার। করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক মাকু বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কেন, আবেগে!’’ পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে এক দল তরুণ। কারও হাতে চালের বস্তা, কারও হাতে গমের থলি।

করিমপুরে। আন্তঃস্কুল ফুটবল। ফাইল চিত্র।

করিমপুরে। আন্তঃস্কুল ফুটবল। ফাইল চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজাউদ্দিন
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

সীমান্তের ফুটবল চলে কীসে?

করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক মাকু বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কেন, আবেগে!’’ পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে এক দল তরুণ। কারও হাতে চালের বস্তা, কারও হাতে গমের থলি। কয়েক জনের কাঁধে ঝুলছে আধ-শুকনো পাট।

ফুটবলের মরসুমে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামে পা রাখলে এমন ছবি চোখে পড়বে। সকলেই কোনও না কোনও ফুটবল ক্লাবের সদস্য। তাঁরা বেরিয়েছেন, ফুটবলের জন্য সাহায্যের সন্ধানে। গ্রামের সকলে সবসময় নগদ দিতে পারেন না। বদলে চাল, গম কিংবা পাটের মরসুমে দু’এক মোড়া পাট খেলার জন্য দিতে কসুর করেন না কেউই। ধান-গম-পাট বিক্রি করে কিছু টাকা আসে।

খেলার খরচও তো আর অল্পস্বল্প নয়। একটা সাব জুনিয়র ফুটবল দল গড়তে কমপক্ষে খরচ বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা। নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক লাল্টু ভূঁইয়া বলছেন, ‘‘কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজারের নীচে একটা ফুটবল মরসুম সামলানো সম্ভব নয়।’’

জেলার বড় শহর কিংবা বর্ধিষ্ণু গঞ্জের ছবিটা আবার ভিন্ন। এ সব জায়গায় বিশেষ করে বড় ফুটবল টুর্নামেন্টে খরচের বেশির ভাগটাই আসে বিজ্ঞাপন, স্পনসর থেকে। ছোটবড় কোম্পানি, স্থানীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি জার্সি থেকে ট্রফিতে নিজস্ব পণ্যের বিজ্ঞাপনী প্রচারের শর্তে টাকা দেন। জনসংযোগের ব্যাপারটা মাথায় রেখে কখনও পুরসভা, পঞ্চায়েত কিংবা পুলিশও আয়োজন করছে ফুটবলের।

এ ছাড়া বছরভর ভিন রাজ্যে বা বাইরের দেশে কাজ করা শ্রমিকেরা বছরে এক বার ঘরে ফেরেন। তাঁদের দেওয়া মোটা অঙ্কের অর্থে বহু গ্রামের ফুটবল ক্লাব বেঁচে রয়েছে। তাঁদের সাহায্যেই আয়োজন করা হয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। এরই মধ্যে ফুটবলের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে এমন হত দরিদ্র ক্লাবের সংখ্যাও বহু। মাকুবাবুর কথায়, “সে ভাবে সরকারি সাহায্য মিলছে কই!”

কিন্তু প্রতি বছর ক্লাব যে খেলাধূলার উন্নতির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান পাচ্ছে। সে সব টাকা তাহলে যাচ্ছে কোথায়? ময়দানে কান পাতলেই শোনা যায়, সে টাকায় চকচকে হচ্ছে ক্লাবের ঘর। সেখানে এলসিডি টিভিতে চলছে আইপিএল কিংবা বিদেশি লিগের খেলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্রীড়া সংস্থার এক কর্তার কটাক্ষ, ‘‘ক্লাব এখন দর্শক তৈরি করেছে। খেলোয়াড় তৈরি হবে পরে!’’

সহ প্রতিবেদন: কল্লোল প্রামাণিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Monsoon Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE