E-Paper

মায়ের দুঃখ ঘোচাতে পুলিশ হতে চেয়েছিল নিহত কিশোর

শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিল কোতোয়ালি থানা এলাকার অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্র। অভিযোগ, মুক্তিপণের লোভে দশম শ্রেণির তিন ছাত্র ওই কিশোরকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর বস্তায় পুরে পুকুরে ফেলে দেয়।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৩০
কৃষ্ণনগরের খুন হওয়া অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রের শোকাহত মা। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে।

কৃষ্ণনগরের খুন হওয়া অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রের শোকাহত মা। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

ছেলের জন্য বাটিতে মাংস তুলে রেখেছিলেন মা। রাতে ছেলে খাবে। ছেলে আর ফেরেনি। সেই মাংসের বাটি পড়ে ঘরের এক কোণে। ছেলের জামা-প্যান্ট আঁকড়ে টানা কেঁদে চলেছেন মা। সন্তানহারা মায়ের বিলাপেচারপাশ থমথমে।

পুজোয় ছেলে ঘড়ি চেয়েছিল মায়ের কাছে। মা বলেছিলেন, পুজোয় নয়, অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার ফল বার হলে কিনে দেবেন। সেই কথাটাই বারবার বলে চলেছেন নিহত কিশোরের মা। তিনি বলেন, “আমাকে কষ্ট করতে দেখে ছেলে বলত পুলিশ হবে। এনসিসিতে যোগ দিয়েছিল। খাকি পোশাকও বানাতে দিয়েছিলাম। তা আর পরা হল না ছেলের।” তিনি আরও বলেন, “বাবার অভাব কোনও দিন বুঝতে দিইনি। সামান্য আয়ের মধ্যেও ওদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করেছি। এত কষ্টের মধ্যেও কম্পিটার কোর্সে ভর্তি করিয়েছিলাম। সব বৃথা হয়ে গেল। সব ছেড়ে চলে গেল ছেলে।”

শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিল কোতোয়ালি থানা এলাকার অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্র। অভিযোগ, মুক্তিপণের লোভে দশম শ্রেণির তিন ছাত্র ওই কিশোরকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর বস্তায় পুরে পুকুরে ফেলে দেয়। অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছে। পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছে বস্তাবন্দি মৃতদেহ। ছেলেকে এ ভাবে হারানোর ধাক্কা কোনও ভাবেই সামলাতে পারছেন না মা। কখনও নিহত ছেলের ছবি আঁকড়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন, কখনও ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

প্রতিবেশীরা জানান, নিহত কিশোরের মা স্বামীকে হারিয়েছেন বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে। বড় ছেলের (নিহত কিশোর) বয়স তখন মাত্র চার বছর। কোলে তখন ছোট ছেলে। লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে দুই ছেলেকে মানুষ করছিলেন। এখন এলাকারই একটি বাড়িতে আয়ার কাজ করেন। রাতে ছোট ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকেন। আর বড় ছেলে থাকত দিদিমার বাড়িতে। সকালে দুই সন্তানকে নিয়ে নিজের ঘরে যেতেন। এ ভাবে চলছিল সংসার। শুক্রবার অবশ্য সেই অভ্যাসে ছেদ পড়েছে। শনিবার ফিরেছে বড় ছেলের নিথর দেহ। ছেলের দেহ আঁকড়ে সন্তানহারা মা বলে ওঠেন, “আমাকেও নিয়ে যা বাবা। আমি তোকে আগলে রাখব। কোনও দিন কোথাও যেতে দেব না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Krishnanagar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy