আঙুল দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে চিহ্নিত করেছেন মেয়ের খুনিকে— বুধবার শনাক্তকরণের পর্ব মিটতে (টিআই প্যারেড) এমনই দাবি করলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরের তরুণী ঈশিতা মল্লিকের মা কুসুম মল্লিক। কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগারে এ দিন ওই খুনে অভিযুক্ত দেশরাজ সিংহকে শনাক্ত করতে নিয়ে যাওয়া হয় কুসুম এবং তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে।
কুসুমের দাবি, সংশোধনাগারের জনা দশেক আবাসিকের পাশে থাকা দেশরাজকে তিনি প্রথম দেখাতেই চিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু যাতে ভুল না হয়, সে জন্য তিন বার প্রত্যেকের সামনে গিয়ে ভাল করে মুখ দেখেন। তাঁর কথায়, “পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরে, দেশরাজকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে বলি— ‘এ-ই আমার মেয়ের খুনি’।”
কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, শনাক্তকরণ পর্ব মেটায়, আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে দেশরাজকে পুলিশ হেফাজতে চেয়ে কৃষ্ণনগর আদালতে আর্জি জানানো হবে। তার পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে খুনে ব্যবহৃত সেভেন এমএম পিস্তল খোঁজার চেষ্টা করবে পুলিশ। দেশরাজের বাবা, বিএসএফ জওয়ানরঘুবিন্দরপ্রতাপ সিংহকে ধরার জন্য রাজস্থানের জয়সলমেরে গিয়েছে কোতোয়ালি থানার একটি দল। বিএসএফ তাকে ঘরবন্দি করে রাখলেও এ দিন পর্যন্ত পুলিশের হাতে তুলে দেয়নি।
গত ২৫ অগস্ট কৃষ্ণনগরের বাড়িতে ঈশিতা যখন খুন হন, কুসুম তখন বাড়িতে ছিলেন না। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরে তিনি দেখেন, দেশরাজ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। পুলিশের কাছে অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, খেলার মাঠে চেনার সুবাদে ছেলে প্রথমেই দেশরাজকে চিনতে পেরেছিল। সে পিস্তল উঁচিয়ে তাঁকে গুলি করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তুগুলি বেরোয়নি।
এ দিন শনাক্তকরণ পর্ব শেষ করে কুসুমদের বাড়ি ফিরতে বিকেল হয়ে যায়। কুসুম জানান, প্রথমে তাঁকে এবং পরে তাঁর ছেলেকে দিয়ে শনাক্তকরণ হয়। সংশোধনাগারের ভিতরে খোলা জায়গায় ১০-১২ জনকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। তাঁর দাবি, “যখন সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, দেশরাজ আমার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে ছিল। এত বড় ঘটনার পরেও চোখে-মুখে ভয় বা অনুশোচনা দেখলাম না।” মহিলার দাবি, দেশরাজকে দেখে তাঁর মাথায় রক্ত চড়ে গেলেও, নিজেকে সামলে নেন তিনি। বলেন, “মনে হল, আইন ওকে চরম শাস্তি দিক। বিচারক নিশ্চয়ই সন্তানহারা মা-বাবারযন্ত্রণা বুঝবেন!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)