Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পুলিশের সামনে আবির মাখল ‘ফেরার’ কামরু

পুলিশের খাতায় তিনি ‘ফেরার’। অথচ সেই পুলিশের সামনেই তিনি আবির খেলে, দু’আঙুলে ‘ভি’ দেখিয়ে জয়ের উৎসব করে গেলেন।

বিজয় উৎসবে কামরুজ্জামান (লাল রঙে চিহ্নিত)।— নিজস্ব চিত্র

বিজয় উৎসবে কামরুজ্জামান (লাল রঙে চিহ্নিত)।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫০
Share: Save:

পুলিশের খাতায় তিনি ‘ফেরার’। অথচ সেই পুলিশের সামনেই তিনি আবির খেলে, দু’আঙুলে ‘ভি’ দেখিয়ে জয়ের উৎসব করে গেলেন।

তিনি শেখ কামরুজ্জামান। তৃণমূল নেতা। গত বিধানসভা নির্বাচনের এক মাত্র বলি, ডোমকলের সিপিএম কর্মী তহিদুল ইসলাম খুনে মূল অভিযুক্ত।

ডোমকল শহরাঞ্চল পুরসভা হয়ে যাওয়ায় ব্লকের বাকি অংশ নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির পুনর্গঠন করা হয় এ দিন। আগেই দল ভাঙিয়েছিল তৃণমূল, এ দিন ভোটে তারা পঞ্চায়েত সমিতি নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। তারই উৎসবে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এসে হাজির হন কামরুজ্জামান মণ্ডল। সেখানে তখন শ’খানেক পুলিশ মোতায়েন। তাদের সামনেই কামরুকে সবুজ আবির মাখিয়ে দেন দলের লোকেরা। মিষ্টিমুখ করান।

ইতিমধ্যে চিত্রগ্রাহকেরা টের পেয়ে ছবি তুলতে শুরু করেছেন বুঝে দু’জন পুলিশকর্মী গিয়ে তাঁকে চলে যেতে বলেন। কামরু সরে পড়েন। হাতের নাগালে পেয়েও পুলিশের কামরুতকে না ধরা এবং বেগতিক বুঝে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অবশ্য জেলার পুলিশ কর্তারা মানতে চাননি। বরং তাঁদের দাবি, মোতায়েন পুলিশকর্মীরা কামরুকে চিনতেই পারেননি।

বিধানসভা ভোটের দিন সকালেই ডোমকলের হরিডোবা গ্রামে বুথের সামনে বোমায় খুন হন সিপিএম কর্মী তহিদুল ইসলাম। অভিযোগের আঙুল ওঠে কামরুজ্জামানের দিকে। স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন তহিদুলের স্ত্রী মুর্শিদা বিবি। তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ১৪ জনের বিরুদ্ধে। প্রধান অভিযুক্ত এই কামরুজ্জামান। এর পরে দীর্ঘদিন তার পাত্তা মেলেনি। স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল হইহই করে রাজ্যের ক্ষমতায় ফেরার পরেই হাওয়া অনুকূল বুঝে এলাকায় ফেরে কামরু। কিন্তু এত দিন কোনও রকম সভা-সমিতিতে সামনে আসেনি।

কংগ্রেস নেত্রী শাওনী সিংহরায়ের দাবি, ‘‘কামরু দির্ঘদিন ধরেই এলাকায় থাকছে। এখন আর ওই বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তা ছাড়া, কোথাও বলেও কিছু লাভ হবে না। ফলে আমরা আর এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি।’’ ডোমকলের সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের বক্তব্য, ‘‘এটা এখন আর নতুন কিছু নয়। খুনের অভিযুক্ত মানস ভুঁইঞা এসপি-র সঙ্গে এক মঞ্চে ওঠেন। এটাই এই রাজ্যের শাসকের সংস্কৃতি। তবুও আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানাব।’’ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের অস্তিত্ব ছিল না। মোট ৩৯ আসনের মধ্যে ২৪টি পেয়েছিল কংগ্রেস আর বাকিটা দখলে ছিল বামেদের। কিন্তু ডোমকল পুরসভা হতেই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ১২টি আসন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। আর সেই সঙ্গে পদ যায় সমিতির সভাপতি জেসমিনা বেগমের। ফলে এ দিন সমিতির ২৭টি আসন নিয়ে পুনর্গঠন হয়। তৃণমূল দখল করে ১৬টি, বাকি ১১টি যায় কংগ্রেস ও বাম জোটের দখলে। ফল ঘোষণার পরেই শুরু হয়ে যায় বিজয়োৎসব। আবির্ভাব হয় কামরুর।

জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল নেতারা কামরুর মতো খুনিকে ঘরে লুকিয়ে রাখলে পুলিশ তার খোঁজ পাবে কী করে!’’ যদিও কামরুজ্জামান যাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, যুব তৃণমূলের সেই অন্যতম রাজ্য সম্পাদক সৌমিক হোসেন বলেন, ‘‘কামরুজ্জামানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তবে বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ফলে এ নিয়ে কিছুই বলব না।’’

আর, জেলা পুলিশের এসডিপিও (ডোমকল) মাকসুদ হাসানের দাবি, ‘‘আমি কামরুজ্জামানকে চিনি না। তবে, লোকমুখে শুনে আমরা একটি পুলিশের দল পাঠিয়েছিলাম ওকে গ্রেফতার করতে। কিন্তু তার আগেই সে এলাকা ছেড়ে সরে পড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sekh Kamruzzaman Murder accused
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE