রাত তখন বেশি হয়নি। তেত্রিশ বছর আগের এক শীতের সন্ধ্যা। গ্রামের রাস্তায় লোক কমে এসেছিল। বাড়ির থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ফুলিয়া রঙ্গমঞ্চে চলছিল যাত্রা। পালার উদ্বোধন সেরে বাড়ি ফিরছিলেন বছর চুয়ান্নোর সিপিএম নেতা নদিয়া জেলা পরিষদের তৎকালীন সদস্য মনুগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রীকে যত্ন করে ওষুধ খাইয়ে গিয়েছিলেন। যাত্রা ভালবাসতেন। অন্য সময় হলে হয়তো দেখার জন্য থেকে যেতেন। কিন্তু স্ত্রী অসুস্থ থাকায় সাড়ে ছটা নাগাদই পা চালিয়েছিলেন বাড়ির দিকে। মাফলারটা গলায় জড়িয়ে টর্চ হাতে ফুলিয়া-তাহেরপুর রোড ধরে হনহন করে হাঁটছিলেন বাড়ির দিকে। যখন বাড়ি থেকে তিনি মেরেকেটে ১০০ মিটার দূরে ঠিক তখনই রাস্তার পাশের অন্ধকার সরু রাস্তা থেকে বেরিয়ে এসেছিল জনা কয়েক দুষ্কৃতী। হাতে ধারাল অস্ত্র। মুহূর্তে তারা ঘিরে ধরে মনুগোপালবাবুকে। তার পর গলায়, মাথায় এলোপাথাড়ি অস্ত্রের কোপ পড়তে থাকে। সন্ধ্যার বাতাস আর গলি নিস্তব্ধতা খানখান করে ছড়িয়ে পড়ে আক্রান্তের আর্তনাদ।
অনেকটা পরে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ১৯৮৬ র ২ জানুয়ারি মনুগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় এমন নৃশংসভাবে খুন হয়ে যান। এলাকার কিছু অপরাধীর কাজের প্রতিবাদ করায় তারাই শত্রু হয়ে উঠেছিল বলে অনেকের অনুমান।