Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Murder

Nadia Beheading Case: ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় থাকাকালীন আলাদা করা হয়েছিল তৃণমূল নেতার ধড়-মুণ্ড!

নমিতার সঙ্গে বাবুসোনার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে দাবি। তার জেরেই বাবুসোনাকে খুনের ‘ফাঁদ’ পাতেন নমিতার স্বামী। এমনটাই পুলিশের দাবি।

প্রেমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় খুন তৃণমূল নেতাকে।

প্রেমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় খুন তৃণমূল নেতাকে। প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২২ ১৫:১৪
Share: Save:

তৃণমূল নেতাকে মাথা কেটে খুনের ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এমনটাই দাবি পুলিশের। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এক বধূর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নিহত তৃণমূল নেতা। একটি কলাবাগানে দু’জনে যখন ঘনিষ্ঠ অবস্থায়, তখন ওই তৃণমূল নেতাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। এর পর আলাদা করে দেওয়া হয় তাঁর ধড়-মুণ্ড। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার পীরপুর গ্রামের দুর্গাপুর এলাকার ওই ঘটনার তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা এ সব তথ্যই পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের ধুবুলিয়ার মায়াকোল এলাকায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি ছিলেন বাবুসোনা ঘোষ (৩৬)। গত কয়েক দিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী শ্যামলী ঘোষ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তকারীরা শ্যামলীর কাছ থেকে জানতে পারেন, গত ১৯ অগস্ট অর্থাৎ শুক্রবার সকালে বাবুসোনার বাড়িতে গিয়ে রবিবার অর্থাৎ ২১ অগস্ট তাঁকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান কৃষ্ণগঞ্জের দুর্গাপুরের বাসিন্দা নমিতা ঘোষ এবং তাঁর স্বামী প্রহ্লাদ ঘোষ। সেই অনুযায়ী ২১ অগস্ট বিকেলে নমিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন বাবুসোনা। তার পর থেকে তাঁর হদিস মিলছিল না। তদন্ত শুরু হতেই প্রহ্লাদ এবং নমিতাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বাবুসোনার মোবাইলের লোকেশন খতিয়ে দেখে তাঁর কাটা মুণ্ড উদ্ধার করে। তদন্তকারীদের দাবি, জেরার মুখে পড়ে নমিতা স্বীকার করে নিয়েছেন বাবুসোনাকে ‘ফাঁদ’ পেতে খুনের কথা। গ্রেফতার হয়েছেন খুনে মূল অভিযুক্ত প্রহ্লাদের দুই আত্মীয় শঙ্কর ঘোষ এবং প্রসেনজিৎ ঘোষও।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, নমিতার সঙ্গে বাবুসোনার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাতে আপত্তি ছিল নমিতার স্বামী প্রহ্লাদের। তাই তিনি স্ত্রীকে ব্যবহার করে বাবুসোনাকে খুনের ‘ফাঁদ’ পেতেছিলেন বলে পুলিশের দাবি। প্রেমিকার আমন্ত্রণ পেয়ে গত রবিবার বিকেলে বাবুসোনা নমিতার বাড়িতে যান। তাঁকে নিয়ে বাড়ির পাশে একটি কলাবাগানে যান নমিতা। পুলিশের দাবি, সেখানে তাঁরা ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলেন। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন প্রহ্লাদ, শঙ্কর ঘোষ এবং প্রসেনজিৎও। তাঁরা তিন জনে মিলে বাবুসোনাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন বলে অভিযোগ। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তিন জনে মিলে কাঁধে করে বাবুসোনার দেহ নিয়ে যান ২০০ মিটার দূরে মাথাভাঙা নদীতে। সেখানে ডুবিয়ে রাখা পাটের বোঝার উপর বাবুসোনার দেহ রেখে ধারালো অস্ত্রের কোপে ধড়-মুণ্ড আলাদা করে দেন শঙ্কর। এর পর ধড় পুঁতে দেওয়া হয় পাটের বোঝার নীচে। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, এই নারকীয় কাণ্ড সেরে নদীর জলে হাত ধুয়ে পাড়ে উঠে আসেন শঙ্কর। বাবুসোনার মুণ্ডটি দেড় কিলোমিটার দূরের জঙ্গলে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে দেওয়া হয়। ধড়টি ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে। এখনও পর্যন্ত বাবুসোনার মাথাটি পাওয়া গেলেও উদ্ধার হয়নি দেহের বাকি অংশ।

আরও পড়ুন:

কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায় বলেন, ‘‘অপহরণের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে প্রহ্লাদ এবং নমিতাকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁরাই খুনের বিষয়টা স্বীকার করেন। শুক্রবার কৃষ্ণগঞ্জ এলাকা থেকে শঙ্কর ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়। শঙ্কর জেরায় স্বীকার করে নিয়েছেন, তিনিই ধড় থেকে মুণ্ড আলাদা করার কাজটি করেছেন।’’

তদন্তকারীদের অনুমান, গোটা পরিকল্পনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল প্রহ্লাদ। তার সাজানো ছক অনুযায়ী পরিকল্পনা এগিয়েছে। পুলিশ মনে করছে, গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বাবুসোনাকে খুন করা হয়েছে। তার ঠিক আগে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা হয়েছিল বাবুসোনার। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দু-এক কথার পর ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দিয়েছিলেন তিনি। পরে তাঁর ফোন ‘সুইচড অফ’ হয়ে যায়। তাতে সন্দেহ হয় তাঁর বাড়ির সদস্যদের। এর পর গত ২৪ অগস্ট অর্থাৎ বুধবার বাবুসোনার স্ত্রী শ্যামলী ঘোষ ধুবুলিয়া থানায় বাবুসোনাকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তাতেই ফাঁস হয়ে যায় বাবুসোনা-হত্যারহস্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Beheadings TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE