Advertisement
E-Paper

স্থান অকুলান ঘরে, কেন্দ্রেই নিভৃতবাস

জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, চাইলেও কিন্তু অনেকে নিজের বাড়িতে যথাযথ নিভৃতবাসে থাকতে পারছেন না। কারণ সকলের বাড়িতে পৃথক থাকার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৪৩
কল্যাণী জেএনএম হাসপাতাল—ফাইল চিত্র।

কল্যাণী জেএনএম হাসপাতাল—ফাইল চিত্র।

আর কয়েক দিনের মধ্যেই বড় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে নদিয়া।

গৃহ নিভৃতবাসের (হোম কোয়রান্টিন) মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় সেখানে মাথাগুনতি একটু-একটু করে কমছে ঠিকই। কিন্তু আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। রাতারাতি তা ১০ থেকে লাফিয়ে হয়েছে ১৪। কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য শুক্রবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে নিভৃতবাস কেন্দ্রের (কোয়রান্টিন সেন্টার) সংখ্যা সাত থেকে বাড়িয়ে ১৩৬ করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৯০০ শয্যা।

যেখানে গৃহ নিভৃতবাসে লোকের সংখ্যা কমছে, সেখানে নিভৃতবাস কেন্দ্র বাড়ানো হচ্ছে কেন?
জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, চাইলেও কিন্তু অনেকে নিজের বাড়িতে যথাযথ নিভৃতবাসে থাকতে পারছেন না। কারণ সকলের বাড়িতে পৃথক থাকার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। জেলার যে বিরাট সংখ্যক মানুষ ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান, তাঁরা অত্যন্ত দরিদ্র। বেশির ভাগেরই একটার বেশি ঘর নেই। সেই ঘরেই তাঁদের সন্তানসন্ততি নিয়ে থাকতে হয়। এঁদের বলা হয়েছে পরিবারের বাকিদের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে থাকতে। অনেক ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে থাকতে দিয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা বাইরের বারান্দায় থাকছেন। যদিও সেই সংখ্যাটা যে খুব বেশি তা নয়। গ্রামে-গঞ্জে কাজ করা আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা জানাচ্ছেন, বাকিরা একটা ঘরেই সকলে মিলে থাকছেন বা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে নিভৃতবাস আদৌ হচ্ছে না। ফলে পরিবারের লোকজনের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। ওই শ্রমিক ঘর থেকে না বেরোলেও পরিবারের লোকজন যখন বাজারহাটে যাচ্ছেন বা অন্য প্রয়োজনে বাইরে বেরোচ্ছেন, তাঁদের থেকে অন্যদেরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত দেওয়ানও বলছেন, “অনেক খেটে খাওয়া মানুষের হোম কোয়রান্টিনে থাকার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাঁদের জন্য কোয়রান্টিন সেন্টার তৈরি করার প্রয়োজোন ছিল।” তাই স্কুলে-স্কুলে নিভৃতবাস শিবির খুলে শয্যাসংখ্যা ৪০৬ থেকে বাড়িয়ে ৯০০ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলার প্রতিটি পুরসভা ও ব্লকে বিভিন্ন সরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কেন্দ্রগুলি করা হয়েছে। এ দিন পর্যন্ত ৩১টি কেন্দ্র পুরোপুরি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছ।
সেই সঙ্গে এমন কিছু লোকজনও আছেন যাঁদের কোনও ভাবেই ঘরের ভিতরে রাখা যাচ্ছে না। তেমন হলে তাঁদেরও নিভৃতবাস কেন্দ্রে এনে রাখা হবে বলে জেলার কর্তারা জানিয়েছেন। অসিতবাবু বলেন, “এ ছাড়া গ্রামগঞ্জ থেকে মানুষকে শহরের শিবিরে নিয়ে আসাও সমস্যা। গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স পেতে দেরি হয়ে যায়। ফলে তাঁদের সেই এলাকায় কাছাকাছি কোয়রান্টিন সেন্টারে ভর্তি করে দেওয়া হবে।” বিদেশ থেকে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদেরও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য নিভৃতবাস কেন্দ্রে এনে রাখা হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।

কল্যাণীতে আপাতত আরও একটি ‘কোভিড ১৯’ হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। কৃষ্ণনগরের কাছে পালপাড়া মোড়়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি বন্ধ থাকা বেসরকারি হাসপাতালে ‘কোভিড ১৯’ হাসপাতাল তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ। প্রাথমিক ভাবে ১০০ শয্যার হলেও প্রয়োজনে সেখানে ৩০০ শয্যা পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।

কল্যাণীর একটি নার্সিংহোমেও ‘কোভিড ১৯’ হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের ওসি (স্বাস্থ্য) বিশ্বজিৎ ঢ্যাং বলেন, “আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা গ্রামে-গ্রামে নজর রাখছেন। আশা করি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।”

Ndia Lock Down Corona Virus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy