Advertisement
০২ মে ২০২৪
Nanigopal Debnath

‘চায়েওয়ালা’ ননীগোপাল আসলে ‘চৌকিদার’, শান্তিপুর রেলগেটে খোঁজ পেল

সকালের ব্যস্ত সময়ে চায়ের দোকানে থিকথিকে ভিড়। সদ্য-নামানো চা একে একে খদ্দেরদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন দোকানদার। আচমকা ট্রেনের হর্ন কানে আসতেই দে দৌড়! হাতে থাকা চায়ের কেটলি রেখে ভিড় ঠেলে ষাট ছুঁই ছুঁই দোকানি ছুটলেন রেল গেটের দিকে।

Nanigopal Debnath of Santipur warns passengers at the railway gate.

প্রায় তিন দশক ধরে পথচারীদের রেলগেট পেরোনোর সময় সতর্ক করে আসছেন নদিয়ার শান্তিপুরের ননীগোপাল দেবনাথ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

প্রণয় ঘোষ
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৫৮
Share: Save:

সকালের ব্যস্ত সময়ে চায়ের দোকানে থিকথিকে ভিড়। সদ্য-নামানো চা একে একে খদ্দেরদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন দোকানদার। আচমকা ট্রেনের হর্ন কানে আসতেই দে দৌড়! হাতে থাকা চায়ের কেটলি রেখে ভিড় ঠেলে ষাট ছুঁই ছুঁই দোকানি ছুটলেন রেল গেটের দিকে। রেল গেটে পৌঁছে শুরু হল তাঁর চিৎকার, ‘‘ট্রেন আসছে, ট্রেন আসছে...।’’

এক বা দু’দিন নয়, টানা প্রায় তিন দশক ধরে এ ভাবেই পথচারীদের রেলগেট পেরোনোর সময় সতর্ক করে আসছেন নদিয়ার শান্তিপুরের ননীগোপাল দেবনাথ। যত ক্ষণ না ট্রেন অতিক্রম করছে, তত ক্ষণ রেলগেটে ঠায় দাঁড়িয়েই থাকেন প্রৌঢ়। ট্রেন চলে গেলে ফিরে যান দোকানে। ননীকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা সকলেই এ ব্যাপারে অবগত। ফলত, ওই সময়টুকু অপেক্ষাই করেন তাঁরা। ননী বলেন, ‘‘চোখের সামনে কোনও মানুষকে মরে যেতে দেখতে পারব না।’’

নবদ্বীপ-শান্তিপুর শাখায় দীর্ঘ দিন ধরে ন্যারোগেজ় লাইনে ট্রেন চলত। এখন শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত ব্রডগেজ় লাইন। অতিমারির আগে পর্যন্তও ওই লাইনে দিনে চারটি ট্রেন যেত। এখন যায় একটিই ট্রেন। সকালে শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগর যায় ৮টা ৪৯ মিনিটে। আবার ফিরে আসে ৯টা ৪৫ মিনিটে। এই দু’বার প্রহরাহীন রেলগেটে ছুটে যান ননী। রেললাইনের পাশেই শান্তিপুরের বাদদিয়া বাজার। সেই বাজারেই ননীর চায়ের দোকান। ননী বলেন, ‘‘লাইনের পাশে বাজার হওয়ায় ট্রেন যাওয়ার কম্পন হয় দোকানে। হর্নও শোনা যায়। ওই শব্দ কানে এনেই রেলগেটে চলে যাই।’’

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, রোদ হোক বা বৃষ্টি, ননী এই কাজ কখনও ভোলেন না। ছাতা মাথায় দিয়েই চলে যান রেলগেটে। স্বঘোষিত প্রৌঢ় গেটম্যান বলেন, ‘‘আসলে লেভেন ক্রসিংটা খোলা। কচিকাঁচারা না দেখেশুনে লাইন পারাপার করে। ওদের সাবধান করতেই ওখানে যাই। অত কিছু ভাবি না। আমার দোকানের সামনে কিছু ঘটে সইতে পারব না।’’ কিন্তু ননী অসুস্থ হলে কী হয়? স্থানীয়েরা জানান, সেই ব্যবস্থাও নাকি ননীই করেন! কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েই তিনি বাড়িতে বিশ্রাম নেন। তবে রেলের উপর খানিক অভিমানী ননী। কোনও অপ্রাপ্তি নয়, ট্রেনের সময়সূচি বদল হলে তাঁকে জানানো হয় না। তিনি বলেন, ‘‘টাইম টেবিলটা যদি আমাকেও দেয়, খুবই সুবিধা হয়।’’

ননীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ শান্তিপুরবাসী।। প্রবীণ বাসিন্দা রমেন মালাকার বলেন, ‘‘ননী ছিল বলেই কত যে প্রাণ বেঁচে গেল! তার কোনও হিসেব নেই। চাকরি বাকরি না হোক, রেল তো একটা স্বীকৃতি দিতে পারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nanigopal Debnath Nadia Shantipur West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE