Advertisement
E-Paper

নয়-ছয় করে দগ্ধ জীবনে প্রেমের পরিণতি পরিণয়

দুধসরের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রি মোবারক শেখ হাসছেন, ‘‘ভাগ্যিস ভুলটা হয়েছিল!’’ আর এলামনগরের মেয়ে, সদ্য বিবাহিত আয়েশা খাতুন বলছেন, ‘‘মোবারকই আমার আঁধার জীবনে আলো নিয়ে এল!’’ 

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০২:১৮
নওদার ওসির আবাসনে মোবারক ও আয়েশা। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

নওদার ওসির আবাসনে মোবারক ও আয়েশা। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

মোবাইল নম্বরের শেষ সংখ্যাটা ছিল নয়। ডায়াল করার সময়ে ভুল করে হাত পড়ে যায় ছয়ে।

আর সেই ভুলেই দগ্ধ জীবন পেল ভালবাসার ছোঁয়া। মঙ্গলবার রাতে মুর্শিদাবাদের নওদার থানার ওসির আবাসনে চার হাত এক হল। নবদম্পতি বললেন, ‘‘কবুল, কবুল, কবুল।’’

দুধসরের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রি মোবারক শেখ হাসছেন, ‘‘ভাগ্যিস ভুলটা হয়েছিল!’’ আর এলামনগরের মেয়ে, সদ্য বিবাহিত আয়েশা খাতুন বলছেন, ‘‘মোবারকই আমার আঁধার জীবনে আলো নিয়ে এল!’’

বছর তিনেক আগে স্কুলে যাওয়ার পথে ডোমকলের এক যুবক আয়েশাকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোড়ে। মুখ-সহ শরীরের ডান দিক পুড়ে যায়। প্রথমে বহরমপুর ও পরে কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে দীর্ঘ দিন তাঁর চিকিৎসা চলে।

অভিযোগ, পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, অ্যসিডে আক্রান্ত আয়েশাকেই দুষতে থাকেন তাঁর বাড়ির লোকজন। আয়েশাও বলছেন, ‘‘আমার বাড়িও আমার বিরুদ্ধে চলে যায়। ২৮ দিন কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমার মা-ও এক বার আমাকে দেখতে যায়নি। তার পরে বাড়ি ফিরলেও সকলে আমাকেই দুষত।’’

সেই দগ্ধ দিনযাপনের মাঝেই এক দিন বেজে ওঠে আয়েশাদের বাড়ির ফোন। ফোনের ওপ্রান্তে মোবারক। মুহূর্তেই দু’জনেই ভুল বুঝতে পারেন। আয়েশা জানান, ‘রং নম্বর’। ব্যস! ওই শব্দ দু’টিই দিনরাত রিনরিন করে বেজে চলে মোবারকের কানে। তাই আবার ফোন। তার পরে নিয়ম করে প্রতিদিন। ফোনে ফোনেই বিনিময় হয় মন। বিয়ের সিদ্ধান নেন মোবারক।

কিন্তু প্রথমে সেই বিয়েতে রাজি ছিলেন না আয়েশা। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল, বিয়েতে রাজি হলে মোবারকের জীবনটাও যদি নষ্ট হয়ে যায়! কিন্তু মোবারকের নাছোড়বান্দা জেদের কাছে হার মানতেই হল!’’

বছরখানেক আগে তাঁরা রেজিস্ট্রি করেন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠান করে বিয়ে। নবদম্পতিকে সম্মান জানাতে নিজের আবাসনেই ভোজের আয়োজন করেছিলেন ওসি মৃণাল সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘নওদা থানা এলাকায় এটা একটা দৃষ্টান্ত। ওঁদের প্রেমকে কুর্নিশ জানাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে এই ছোট্ট আয়োজন।’’

মোবারক বলছেন, ‘‘তখন বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। বাড়িতে ফোন করতে গিয়ে ফোন চলে গিয়েছিল আয়েশার কাছে। আমার এই ফোনটাকে যত্ন করে রেখে দেব। এটার জন্যই তো আয়েশার মন পেলাম!’’

Acid Victim Naoda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy