Advertisement
E-Paper

খেতে বাড়ে গম, তাড়া খায় পুলিশ

পুব থেকে আসা ঝলসা রোগ শেষ করে দিয়েছিল বিঘের পর বিঘে গম চাষ। তাই সরকার বলেছে, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে এ বার গম চাষ করা যাবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৯

পুব থেকে আসা ঝলসা রোগ শেষ করে দিয়েছিল বিঘের পর বিঘে গম চাষ। তাই সরকার বলেছে, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে এ বার গম চাষ করা যাবে না।

তবু চাষ হয়েছে। নদিয়ায় তা কেটে দিয়ে চাষিদের বিকল্প চাষে নামিয়েছে কৃষি দফতর। মুর্শিদাবাদে কিন্তু অন্য ছবি। ডোমকল, নওদা, হরিহরপাড়া, লালগোলায় মাঠের পর মাঠ সোনালি গমে ভরা। আর তা কাটতে গেলেই তাড়া খেয়ে পালাতে হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের লোকেদের।

গম চাষ বন্ধ করতে বিকল্প হিসেবে ডাল বা সর্ষে বীজ বিলি করেছিল কৃষি দফতর। কিন্তু তা বেশির ভাগ চাষির হাতে পৌঁছয়নি। গমের বদলে বিকল্প চাষের সরকারি প্রচারও শহরের গণ্ডী ছাড়িয়ে গাঁয়ের মাঠাঘাটে পৌঁছয়নি।

ফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।

শুধু ডোমকলেই প্রায় ২৪০ হেক্টর জমিতে তরতরিয়ে বেড়ে উঠেছে গম। স্থানীয় মেহেদিপাড়া গ্রামের চাষি জান মহম্মদ মণ্ডলের বিশ বিঘা জমির বেশির ভাগটাতেই গম হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কৃষি দফতরে বিকল্প চাষের বীজ চাইতে গিয়েছিলাম। আমায় আধ কেজি সর্ষের বীজ দিয়ে ওঁরা বললেন, ‘এর বেশি পাবে না।’ ও দিয়ে কী হবে? সংসার চলবে? বাধ্য হয়েই ঘরে থাকা গমের বীজ বুনেছি।’’ এখন যখন গমের দানা ধরেছে, কৃষি দফতর কেন তা ভাঙতে আসছে, তা-ও তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। খেতের গম তাঁরা শুধু বিক্রিই করেন না, তা দিয়ে সম্বচ্ছর খাওয়াও চলে। প্রশাসন চাষ নষ্ট করে দিলে গম কিনে খেতে হবে।

প্রতিরোধের শুরুটা হয়েছিল মাস দেড়েক আগে ডোমকলে ডুমুরতলায়। চাষিরা পুলিশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলেন। গড়াইমারি পঞ্চায়েতের শ্রীকৃষ্ণপুরে হাঁসুয়া নিয়ে তাড়া করেন চাষিরা। ২৫ জানুয়ারি মেহেদিপাড়ার বর্তনাবাদে ১৫ গাড়ির কনভয় নিয়ে যান ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। লাঠি-হাঁসুয়া নিয়ে মহিলারা এগিয়ে আসেন। ২৭ জানুয়ারি পিরোজপুরে হাজির হন ডোমকলের বিডিও। পুলিশ বাহিনী ছিল ৭০-৮০ জনের। হাজার তিনেক চাষি মাঠে নামেন। বিডিও-কে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। পাঁচটা গাড়িতে ভাঙচুর চলে। কর্তারা পালিয়ে বাঁচেন।

সে দিনের পরে আর গম নষ্ট করা যায়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, নবান্নের নির্দেশে চাষিদের উপরে বলপ্রয়োগ করা যাবে না। ফলে পুলিশ নিধিরাম সর্দার। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপস কুণ্ডু বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি রাজ্য স্তরে জানানো হয়েছে।’’

সিপিএমের ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, সর্বদল বৈঠক করে চাষিদের বোঝানো হোক। তা হয়নি, উল্টে বিকল্প চাষের বীজ শাসক দলের নেতাদের গুদামে পৌঁছে গিয়েছে।’’ ডোমকলের পুরপ্রধান তথা যুব তৃণমূল নেতা সৌমিক হোসেনের পাল্টা দাবি, ‘‘সিপিএমই চাষিদের খেপাচ্ছে। একটা জাতীয় বিষয় নিয়ে ওরা রাজনৈতিক খেলা খেলছে।’’

নদিয়ায় করিমপুর ১ ও ২ এবং কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে কিছু জমিতে গম চাষ হয়েছিল। কৃষি দফতর সেগুলো কেটে দিয়ে বিকল্প চাষ করিয়েছে। কিন্তু কৃষ্ণগঞ্জে মাথাভাঙা ঘেঁষে বিজয়পুর লাগোয়া বাংলাদেশি জমি রয়েছে কিছু। সেখানে হাওয়ায় দুলছে গমের চারা। প্রশাসনের হাত-পা বাঁধা। স্থানীয় মাটিয়াড়ি-বানপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেন, “বাংলাদেশের চাষিদের গম পুড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেছি। লাভ হয়নি।” নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “বিষয়টা রাজ্যকে জানিয়েছি।

Wheat Farming Farmers Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy