বাঁশির তীক্ষ্ণ আওয়াজ খানখান করে দেয় রাতের নিস্তব্ধতা।
নাহ্, কেউ বিরক্ত হয় না। বরং সেই আওয়াজ কানে গেলে স্বস্তিতে ঘুমোয় মঠ-মন্দিরের শহর নবদ্বীপ। মাঝে কিছুদিন বাঁশির ফুঁয়ে তেমন জোর ছিল না। কিন্তু জানুয়ারি থেকে বেশ কয়েকটি চুরি, খুন ও কেপমারির ঘটনার পর থেকে ফের শহরে শুরু হয়েছে রাতপাহারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৪ জানুয়ারি রাতে নবদ্বীপের মহেশগঞ্জে একটি বাড়িতে গৃহকর্তার গলায় ভোজালি ধরে ডাকাতি করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে নবদ্বীপের নন্দীপাড়ায় খুন হন পঁয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধা নমিতা সাহা।
তার ঠিক কয়েক দিন পর থেকে শহর জুড়ে শুরু হয় কেপমারদের দৌরাত্ম্য। কখনও বেল পাড়ার নাম করে গাছে তুলে মোবাইল ও সাইকেল হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে এক যুবক। কখনও সোনার গয়না পরিষ্কারের গুঁড়ো বিক্রি করতে এসে শাশুড়ি-বৌমার সোনার হার নিয়ে চম্পট দিয়েছে দু’জন। কখনও আবার সোনার দোকানে ঢুকে নিজেকে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলে পরিচয় দিয়ে সোনার চেন হাতিয়ে পালিয়েছে কেপমার।
উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা জানিয়েছেন, একের পর এক এমন ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। কিন্তু ফের রাতপাহারা শুরু হতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। পুলিশও ঝুঁকি না নিয়ে নবদ্বীপের সার্বিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন পাড়ায় নৈশরক্ষী মোতায়েনে জোর দিচ্ছে।
১৯৯৫ সালে নবদ্বীপের তৎকালীন আইসি সুকুমার দত্ত শহর ও লাগোয়া গ্রামে রাতপাহারার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তারপর থেকে এলাকায় ছোটখাটো চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বছর দশেক আগেও নবদ্বীপ পুর এলাকায় ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডেই নিয়ম করে রাতপাহারা দিতেন স্থানীয় লোকজন। তার পর বছর আটেক আগে থেকে একে একে বন্ধ হতে শুরু করে রাতপাহারা। নবদ্বীপ কেন্দ্রীয় নৈশ রক্ষাবাহিনীর সম্পাদক সমীর হোড় জানান, একটা সময়ে নবদ্বীপ শহর ও পঞ্চায়েত মিলিয়ে রাতপাহারা দিত মোট ৩৬টি দল। পঞ্চায়েতের দিকে কয়েকটি এলাকায় রাতপাহারা চালু থাকলেও শহরের বেশির ভাগ এলাকায় সে সব পাট চুকে গিয়েছিল। পুলিশের উৎসাহে ফের নতুন করে রাতপাহারা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
সংগঠনের কার্যকরী সম্পাদক লালু মোদক জানান, ইতিমধ্যে ১৮টি দল প্রতাপনগর বাজার, চারিচারা বাজার, রাধাবাজার, বড়ালঘাট, দুধবাজার এলাকা-সহ মুকুন্দপুর, ফকিরতলা, চরমাজদিয়া বাজারের মতো বেশ কিছু এলাকায় পাহারা দিচ্ছে। জেলার পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, রাতপাহারা চললে অপরাধ যেমন কমে, তেমনি রাতবিরেতে কেউ সমস্যায় পড়লে বা অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁদেরও দ্রুত সাহায্য করতে পারে নৈশরক্ষীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy