Advertisement
E-Paper

ভোরের বাঁশিতে মাঠ পাহারা তাজুর

একটা দিনও আর দেরি করেনি তাজ। তার বন্ধুরা কেউ আমল না দিলেও সে পরের দিন থেকেই বেরিয়ে পড়েছে বাঁশি আর টর্চ নিয়ে। সঙ্গে গাঁয়ের দশ-পনেরো জন ফুফা-চাচি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মহিলারা। মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে নিত্য দিন চলছে এই নজরদারি। 

কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৫
তাজ শেখ। ছবি: নিজস্ব চিত্র

তাজ শেখ। ছবি: নিজস্ব চিত্র

তখনও আকাশ ফরসা হয়নি। কনকনে ঠাণ্ডা। হাতে টর্চ আর মুখে বাঁশি নিয়ে পাহারা দিতে বেরিয়ে পড়েছে ন’বছরের ছেলেটা।

ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের আড়ালে কেউ বসে পড়েনি তো? তা হলেই সে তেড়ে-ফুঁড়ে বাঁশি বাজাবে। ফেলবে চোখ ঝলসানো টর্চের আলো! কার সাধ্যি, এর পরেও বসে থাকে!

ন’বছরের ছেলেটার নাম তাজ শেখ। আদর করে পড়শিরা ডাকেন তাজু। বাড়ি তার মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার ভরতপুর ১ ব্লকের ভরতপুর গ্রামে। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। প্রায় দেড় মাস আগে দক্ষিণ ভরতপুর প্রাথমিক স্কুলে এসে প্রশাসনের লোকজন বুঝিয়ে গিয়েছিলেন, উন্মুক্ত জায়গায় প্রাতঃকৃত্য সারলে কী ভাবে পরিবেশ দূষিত হয়, রোগ ছড়ায়। রোজ ভোরে দল বেঁধে পাহারা দেওয়ার পরামর্শও দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা।

একটা দিনও আর দেরি করেনি তাজ। তার বন্ধুরা কেউ আমল না দিলেও সে পরের দিন থেকেই বেরিয়ে পড়েছে বাঁশি আর টর্চ নিয়ে। সঙ্গে গাঁয়ের দশ-পনেরো জন ফুফা-চাচি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মহিলারা। মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে নিত্য দিন চলছে এই নজরদারি।

গাঁয়ের হাসিনা বেগম, হাসনেহারা বেগম, টুসি বেগমরা বলেন, “কোনও দিন হয়তো আমাদের ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে যায়। কিন্তু তাজ ঠিক সময়ে হাজির। অনেক দিন ও-ই ডাকাডাকি করে আমাদের ঘুম থেকে তোলে।” পড়শি কদিরুন বেওয়া, সাফিরুন বিবিদের কথায়, “ঝোপে-ঝাড়ে যদি কাউকে দেখা যায়, বড়রা ছাড় দিলেও তাজ কোনও কথাই শুনবে না। নাগাড়ে বাঁশি বাজিয়েই যাবে!’’

বালকের বাঁশিতে কাজ হয়েছে। ভরতপুরে শল্লাপাড়া, মিদ্দাপাড়া, খলিফাপাড়া, আসলনগর পাড়া মিলিয়ে চারশো পরিবারের বাস। আড়াইশো পরিবারের আগে থেকেই শৌচাগার ছিল। গত দেড় মাসে পাহারার ঠেলায় আরও শ’খানেক পরিবার শৌচাগার তৈরি করেছে। বাকি আছে আর পঞ্চাশটি পরিবারের।

মজার ব্যাপার, তাজের নিজের বাড়িতে এখনও শৌচাগার নেই। তার দিনমজুর বাবা রাজেশ শেখ দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার টানতে নাজেহাল। এই বাড়িও আসলে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। চোঁয়াতোর গ্রামে নিজের বাড়ি ছেড়ে এখানে এসে তিনি ঠাঁই নিয়েছেন। তাজের মা শেফালি বিবি জানান, বাড়ি করার জন্য কাঠা দেড়েক জমি কিনেছেন তাঁরা। কিন্তু টাকা নেই, তাই কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। ওই পাড়াতেই তাঁর বোনের বাড়িতে গিয়ে তাঁরা শৌচকার্য সেরে আসেন।

খো‌লা জায়গায় প্রাতঃকৃত্য রুখতে তাজ এত খেপে উঠল কেন?

ছেলের সটান জবাব, “আমার এই মামার বাড়ির পাশের জঙ্গলে ভোর থেকে পর্যন্ত লোকে শৌচকার্য করত। এত দুর্গন্ধ আসত যে টেকা যেত না। কী জঘন্য অভ্যেস, খুব রাগ হত। তাই সুযোগ পেতেই মাঠে নেমে পড়েছি।”

ভরতপুর ১-এর বিডিও অঞ্জন চৌধুরী বলেন, “ওইটুকু ছেলে যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠে পাহারা দিতে পারে, বড়রাই বা পারবেন না কেন! তাজকে আমরা মিশন নির্মল বাংলার অন্যতম মুখ হিসেবে তুলে ধরব।”

Nirmal Bangla Taz Seikh Taju Toilet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy