Advertisement
E-Paper

পর্যটন মানচিত্রে ব্রাত্যই থেকে গেল লালগোলা

কথা ছিল, ঐতিহাসিক মরানদী কলকলি সংস্কার করা হবে। লালগোলা মুক্ত কারাগারের আবাসিকরা সেখানে পর্যটকদের নিয়ে নৌকাবিহার করাবেন। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯০ লক্ষ টাকা। সংস্কার করার কথা ছিল কলকলি ও মুক্তকারাগার লাগোয়া লালগোলা মহারাজের ভগ্নপ্রায় ‘হাজারদুয়ারি’ ভবন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪১

কথা ছিল, ঐতিহাসিক মরানদী কলকলি সংস্কার করা হবে। লালগোলা মুক্ত কারাগারের আবাসিকরা সেখানে পর্যটকদের নিয়ে নৌকাবিহার করাবেন। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯০ লক্ষ টাকা। সংস্কার করার কথা ছিল কলকলি ও মুক্তকারাগার লাগোয়া লালগোলা মহারাজের ভগ্নপ্রায় ‘হাজারদুয়ারি’ ভবন। সামনের শ’খানেক বিঘা জুড়ে মহারাজাদের আমবাগানে ফাঁকা হয়ে যাওয়া জায়গায় নতুন আমগাছ লাগানোরও কথা ছিল। এ ভাবেই পর্যটন শহর লালবাগ থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে পদ্মাপাড়ের সীমান্ত শহর লালগোলাকেও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু সে সব কেবল আলোচনার স্তরেই সীমাবদ্ধ। বছর খানেক হয়ে গেলেও সে ব্যাপারে কাজের কাজ কিছুই হল না। ফলে হতাশা জাপ্টে ধরেছে লালগোলাবাসীকে।

পদ্মারচর, মুক্তকারাগার, কলকলি নদী, ‘হাজারদুয়ারি’ নামে লালগোলার রাজবাড়ির অতিথিশালা ও বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত শৃঙ্খলিত কালীমূর্তি নিয়ে পর্যটনকেন্দ্রের প্রস্তাব এখনও বিশ বাঁও জলের তলায়। এমনকী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইজারার পরিমান পুনর্মূল্যায়ন না করায় কয়েক বছর ধরে কলকলি ও আমবাগান থেকে কানাকড়িও সরকারের ঘরে জমা পড়ছে না।

কয়েক দশক আগের কথা। তখন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। কলেজ গড়ার জন্য লালগোলার প্রয়াত মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়ের উত্তরপুরুষের কাছ থেকে আট লক্ষ টাকায় রাজপ্রাসাদ, অতিথিশালা, কালীমন্দির, নাটমন্দির, আধ কিলোমিটার দীর্ঘ কলকলি ও শ’ খানেক বিঘা জুড়ে বিশাল আমবাগান কিনে নেন। সব মিলিয়ে জমির পরিমান প্রায় ৩০০ বিঘা। সেখানে অবশ্য কলেজ গড়ে ওঠেনি। ১৯৮৭ সালে ৩১ জানুয়ারি সেই রাজপ্রাসাদে গড়ে ওঠে সাজাপ্রাপ্তদের জন্য মুক্ত-সংশোধনাগার। ওই রাজবাড়ি লাগোয়া মন্দিরে রয়েছে শিকল দিয়ে পা বাঁধা কালীমূর্তি। বহরমপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থাকার সময় বঙ্কিমচন্দ্র লালগোলার রাজবাড়ির অতিথিশালার আতিথ্য গ্রহণ করেছেন বহুবার। সাহিত্য গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি, আনন্দমঠের ‘মা কি ছিলেন’ ও ‘মা কি হইয়াছেন’ তার বীজ নিহিত আছে লালগোলার কলকলি তীরে শৃঙ্খলিত কালীমন্দিরের মধ্যে। নির্বাক হয়ে যাওয়ার আগে কবি কাজি নজরুল ইসলাম ওই মন্দিরে বসে বহুবার শাক্ত সাধনা করছেন। এই ঐতিহ্যকে সামনে রেখে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার কথা ওঠে।

একদা পদ্মার শাখানদী কলকলি মাছ চাষের জন্য বার্ষিক ৫ লাঘ টাকায় লিজ দেওয়া হত। বার্ষিক লাখ দুয়েক টাকায় আমাবাগান লিজ দেওয়া হত। লালগোলা ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সারজেমান শেখ বলেন, ‘‘অনেক গাছ মরে গিয়েছে। কলকলিতে আর আগের মতো জল থাকে না। তাই ৫০ হাজার টাকার বেশি দামে কেউ বাগান লিজ নিতে নারাজ। কলকলিরও জন্য বছরে দেড় লাখ টাকার বেশি দিতে চায় না কেউ। ফলে জেল কর্তৃপক্ষ লিজ দিতে নারাজ।

মাস দশেক আগে ওই অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন লালগোলা থেকে সম্প্রতি বর্ধমানের জেল সুপার পদে বদলি হয়ে চলে যাওয়া শুভেন্দুকৃষ্ণ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘কলকলির ও আমবাগানের লিজের পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য যথাক্রমে মৎস্য দফতর ও কৃষি দফতর দায়িত্ব দেয়। তারপরে বদলি হই।’’ মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা জয়ন্ত প্রধান বলেন, ‘‘নথি না দেখে এ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

Lalgola Tourist spot Tourism map
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy