Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

শূন্য তেজরি শুনেই ক্ষোভ, সন্ত্রস্ত কর্মীরা

ব্যাঙ্কে পা বাড়িয়ে ‘নো ক্যাশ’ দেখার আতঙ্কে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে মানুষ। শহর ছাড়িয়ে, গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলিতে তেমন টাকার খাঁই নেই— এমনই একটা ধারনা করেছিলেন অনেকে।

টাকা না পেয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় বসেছেন গ্রাহকেরা।—নিজস্ব চিত্র।

টাকা না পেয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় বসেছেন গ্রাহকেরা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share: Save:

ব্যাঙ্কে পা বাড়িয়ে ‘নো ক্যাশ’ দেখার আতঙ্কে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে মানুষ। শহর ছাড়িয়ে, গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলিতে তেমন টাকার খাঁই নেই— এমনই একটা ধারনা করেছিলেন অনেকে। সে গুড়ে বালি ঢেলে গত কয়েক দিন ধরে সেই সব ব্যাঙ্কেও ঝুলে গিয়েছে, একই নোটিস, ‘নো ক্যাশ।’

আর, তার জেরেই, মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভের সঙ্গে পথ অবরোধেও নেমে পড়লেন গ্রামীণ মানুষ।

সুতির মহেশাইল, সামশেরগঞ্জের অন্তর্দীপার পর নবগ্রামের গুড়াপাশলার গ্রামীণ ব্যাঙ্কেও টাকা না পেয়ে গ্রাহকদের বিক্ষোভ এ দিন এসে পড়ে সামনের রাস্তার উপরে। শুরু হয় অবরোধ। বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে লালগোলার ময়া, হরিহরপাড়ার রুকুনপুর এবং জঙ্গিপুরের সম্মতিনগরেও।

মঙ্গলবার, সর্বত্রই বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে।

ব্যাঙ্কের সম্মতিনগর শাখায় টাকা না আসার কথা জানিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বোর্ড । গ্রাহকেরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে লালগোলা- জঙ্গিপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন সম্মতিনগরে কয়েকঘন্টা ধরে। টাকা না পেয়ে গ্রাহকদের বিক্ষোভ সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে।

টাকার জোগান নেই বলে বোর্ড টাঙানো দেখেই সম্মতিনগরে ক্ষোভ ছড়ায় এদিন। লাইনে দাঁড়ানো বৃদ্ধ বৃদ্ধারাও হাতে পাননি তাদের বার্ধক্য ভাতার টাকা। ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন খোদারামপুর গ্রামের ৬৬ বছরের বৃদ্ধা বিলকিশ বেওয়া। মবলছেন, ‘‘এ কি মসকরা বল তো!’’

সত্তর বছরের বৃদ্ধ আব্দুল সাত্তার অসুস্থ । প্রতি দিন ওষুধ ছাড়া চলে না। এ দিন তিন হাজার টাকা জন্য লাইনে দাঁড়ালেও টাকা মেলেনি। চকপাড়া গ্রামের ৬৮ বছরের বৃদ্ধা জামিলা বেওয়া ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছিলেন বার্ধক্য ভাতার হাজার টাকা তুলতে। খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকেও।

সম্মতিনগর শাখার ম্যানেজার পঙ্কজ কুমার দাস বলছেন, “এখন পর্যন্ত ব্যাঙ্কে এসেছে ১১ লক্ষ টাকা টাকা। প্রয়োজনের তুলনায় যা এক শতাংশও নয়। ফলে গ্রাহকদের টাকা দেওয়া যাচ্ছে না।’’ তির মহেশাইল শাখায় বার বার তাগাদা দেওয়ার তেরো দিন পর হাতে পেয়েছেন মাত্র তিন লক্ষ টাকা। তাও ২০০০ হাজার টাকার নোটে। ১৫০ জনকে সে টাকা দিতেই শেষ। তাই ব্যাঙ্কে চড়াও হয় সেখানকার গ্রাহকেরা। ব্যাঙ্ক খুলতে বাধা দেন তাঁরা। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের হাত থেকে কোনোরকমে কর্মীদের বাঁচান।

গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার নীতিরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতি দিন সকাল থেকে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে, টাকা দেওয়া হচ্ছে না। কী করব বলুন তো!’’ তাঁর গলাতে অসহায়তা। আহিরণের চেহারাটাও একই। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, “৭৪টি শাখার মধ্যে ৬৫টিতে টাকা নেই বললেই চলে। এই মুহূর্তে গ্রামীণ ব্যাঙ্কে প্রয়োজনের তুলনায় দশ শতাংশ টাকারও জোগান নেই। অনেক শাখায় তাই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গ্রাহকেরা। আমাদের যে হাত-পা বাঁধা তা কেউ বুঝছেন না। সর্বক্ষণ সন্ত্রস্ত হয়ে আছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Bank Protest Jangipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE