Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আম-চাষ পড়ে নবাবি আমলেই

নবাবি আমলেই বুঝি শুরু হয়েছিল আম-চাষ। কিন্তু ইতিহাস এমন তথ্যকে মান্যতা দিচ্ছে কই? ইতিহাসবিদেরা বলছেন, এ দোষ সময়ের নয়। দোষ খোদ রসাল সুমিষ্ট ফলটির। ডাগর দেহে রসের সাগর। এমন ফলের প্রেমে মজতে নবাব থেকে পেয়াদার কোনও বিধিনিষেধ কোনও কালেই ছিল না।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

নবাবি আমলেই বুঝি শুরু হয়েছিল আম-চাষ।

কিন্তু ইতিহাস এমন তথ্যকে মান্যতা দিচ্ছে কই?

ইতিহাসবিদেরা বলছেন, এ দোষ সময়ের নয়। দোষ খোদ রসাল সুমিষ্ট ফলটির। ডাগর দেহে রসের সাগর। এমন ফলের প্রেমে মজতে নবাব থেকে পেয়াদার কোনও বিধিনিষেধ কোনও কালেই ছিল না। ফলে আম নিয়ে আম-আদমির রোমান্সের বহু কাহিনী লুকোচুরি খেলে ক্ষয়ে যাওয়া নবাবি আমলের কড়ি-বরগায়।

নবাবি আমল আমচাষের সূচনা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আম সংরক্ষণের প্রামাণ্য নথি কিন্তু তাদের পক্ষেই রয়েছে।

বহু বছর আগে নবাবি আমলে যা সম্ভব হয়েছিল, আজ ‘স্মার্ট’ যুগে তা সম্ভব হল না কেন?

মুর্শিদাবাদের মতো আম উৎপাদনশীল জেলায় এখনও পর্যন্ত আম সংরক্ষণের কোনও পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি, এই তথ্যটুকু দিয়েই দায় এড়াচ্ছেন হালের কর্তারা। কোনও জুতসই জবাব নেই প্রশাসনের কাছে।

উদ্যানবিদ সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া ‘মুর্শিদাবাদের আমের সূচনা ও গৌরবগাথা’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘খ্রীষ্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। প্রথমে সেনা ছাউনি ফেলেন আমবাগানে।’’ অর্থাৎ, সুপ্রাচীন কাল থেকে এ দেশে আমবাগান ছিল। তবে তার প্রসার ঘটেছে নবাবি আমলে, নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায়। এমনকী, সারা বছর আমের স্বাদ পেতে নবাবি আমলে আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল বলেও সমরেন্দ্রনাথবাবুর দাবি।

সমরেন্দ্রনাথবাবু লেখায় পাওয়া যাচ্ছে—মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার নবাব হয়ে আসার আগে মুর্শিদাবাদের আমের কথা শুনেছিলেন। তিনি শীতকালে ভাগীরথীর তীরে প্রথম পৌঁছন। এসেই তিনি আম চেয়ে বসেন। নবাবকে শীতের সময়ের সব ফল দেওয়া হয়। না-খুশ নবাব ফরমান জারি করলেন, সারা বছর আম চাই তাঁর।

নবাবের লোক মারফৎ খবর পেয়েই ওয়ারেন হেস্টিংস আম সংরক্ষণে মনযোগী হন। গ্রীষ্মের আধপাকা, বা পাকা আমের বোঁটায় মোম লাগিয়ে মধু বা ঘিয়ের পাত্রে ডুবিয়ে রাখা হত। শীতকালে ঘি থেকে বের করে গরম জলে ধুয়ে নেওয়ার পর বরফজলে ডুবিয়ে নিলেই আম নাকি আবার সেই চেনা স্বাদ ফিরে পেত।

নবাবি আমল থেকে চোখ ফেরালে দেখা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদে আজও আম সংরক্ষণের কোনও আধুনিক ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি। কিন্তু কেন? উদ্যানপালন বিভাগের উপ-আধিকর্তা গৌতম রায় আম চাষের সাত সতেরো নিয়ে প্রচুর তথ্য দিলেও সংরক্ষণ নিয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

তথ্য বলছে, এই জেলায় গড়ে ফি বছর প্রায় এক লক্ষ মেট্রিক টন আম ফলে। ১৯৯৭ সালে একটি সংস্থাকে দিয়ে আম সংরক্ষণ নিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিল বাম সরকার। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ শিল্পের প্রভূত সম্ভবনার কথা জানিয়েছিল সেই সংস্থা। তার পর জেলায় দুটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা হলেও আম, কাঁঠাল ও লিচুর মতো দ্রুত পচনশীল ফল সংরক্ষণে কোনও দিশা দেখাতে পারেনি সেগুলি।

আমচাষি হায়াতুন নবী বলেন, ‘‘সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ না থাকায় ফলচাষিরা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাধারণ মানুষও বে-মরসুমে আমের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ আধিকারিক শুভেন্দু জানা বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থানুকুল্যে আড়াই কোটি টাকার সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের একটি শিল্পের শিলান্যাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মনতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রকল্পটির কাজ শুরু করেছে বহরমপুর পুরসভা।’’

সেই প্রকল্প কবে দিনের আলো দেখবে তা নিয়েও হাজার প্রশ্ন রয়েছে। ততদিন বিজ্ঞাপনের বোতলবন্দি পানীয়ই আমের রসনা তৃপ্তির আধার হয়ে থাকবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mango Technology
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE