Advertisement
E-Paper

গরমের ছুটিতেও গমগম করছে স্কুল

সাদা কামিজের উপর কালচে নীল ওড়না-সালোয়ার। ভরা ক্লাসরুমে বইয়ে মুখ গুজে এক ঝাঁক ছাত্রী। মাঝেমধ্যেই শিক্ষিকারা এসে জানতে চাইছেন—‘ হ্যাঁ রে, বুঝতে কোথাও অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:৪০
দিদিমনিদের তত্ত্বাবধানে চলছে ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র

দিদিমনিদের তত্ত্বাবধানে চলছে ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র

সাদা কামিজের উপর কালচে নীল ওড়না-সালোয়ার। ভরা ক্লাসরুমে বইয়ে মুখ গুজে এক ঝাঁক ছাত্রী। মাঝেমধ্যেই শিক্ষিকারা এসে জানতে চাইছেন—‘ হ্যাঁ রে, বুঝতে কোথাও অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

গরমের ছুটিতে যখন প্রায় সব স্কুল ভোঁ ভোঁ, তখন চাকদহের কামালপুর আদর্শ বিদ্যাপীঠে (বালিকা) ঢুকলে কিঞ্চিৎ হোঁচট খেতে হচ্ছে বইকি! ছাত্রীদের ভিড়, শিক্ষিকাদের তৎপরতা দেখে কে বলবে গরমের ছুটি চলছে। বরং স্কুলে পা রাখতেই শিক্ষিকাদের সবিনয় অনুরোধ, ‘‘আস্তে কথা বলুন, প্লিজ। ওরা পড়ছে।’’

স্কুলে কচিকাঁচারা নেই ঠিকই। তবে গরমের ছুটিতেও রুটিন বদলায়নি দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের। পড়ুয়াদের সঙ্গে স্কুলে হাজির শিক্ষিকারাও। কারণ জানতে চাইলে শিক্ষিকারা সমস্বরে বলছেন, ‘‘সময় বড় কম। সিলেবাসটা তো শেষ করতে হবে।’’

গোটা একটা বছরে স্কুলে ছুটির সংখ্যা এখন নেহাত কম নয়। তার উপরে আবার এপ্রিলের মাঝামাঝি গরমের দাপটে স্কুল বন্ধ ছিল দীর্ঘ দিন। এর পর ভোটের সময় বুথ হয়েছিল স্কুলে। তখনও চার-পাঁচ দিন বন্ধ ছিল স্কুল। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে, পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করাই দায়। তাই বাধ্য হয়েই ‘ছুটি বিসর্জন’ দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ছুটিতে স্কুল করতে ইচ্ছুক পড়ুয়াদের নিয়ে চলছে ক্লাস। পড়ুয়াদের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। দশম শ্রেণির ১০০ জন পড়ুয়ার মধ্যে অন্তত ৭০ জন এবং দ্বাদশ শ্রেণির ৯০ জন পড়ুয়ার মধ্যে কমপক্ষে ৬০ জন উপস্থিত থাকছে প্রতিদিন। আর শিক্ষিকাদের উপস্থিতির হার? প্রায় একশোয় একশো!

গত ১৯ মে থেকে গরমের ছুটি পড়েছে। চলবে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত। অধিকাংশ বিদ্যালয় যখন এই সময় গরমের ছুটি কাটাচ্ছে, তখন কামালপুরের এই বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পুরোদমে চলছে কোচিং ক্লাস। নেওয়া হচ্ছে কম্পিউটারের ক্লাসও।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ৭৭ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। পাশের হার ৯৬ শতাংশ। পল্লবী শূর সর্বোচ্চ নম্বর (৬০৮) পেয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল ফল করেছে স্কুল। ৬৭ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। পাশের হার ৭২ শতাংশ। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে তিলোত্তমা দত্ত (৪৫০)। প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা ভদ্র বলছেন, ‘‘খুব গরিব পরিবার থেকে মেয়েরা আমাদের স্কুলে পড়তে আসে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আবার প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। ফলে ওরা যাতে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে আরও ভাল ফল করতে পারে, সে জন্যই এই উদ্যোগ। আমাদের বিশ্বাস এ ভাবে চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে স্কুলের আরও ভাল ফল হবে।’’

ছাত্রীরা কিন্তু দিদিমনিদের এই উদ্যোগে বেশ খুশি। দ্বাদশ শ্রেণির শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য, অর্পিতা ঘোষেদের কথায়, ‘‘স্কুলে পড়াটা এগিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসটাও শেষ হবে। বাড়িতে বসে ছুটি কাটালে এটা হত না।’’ দশম শ্রেণির অনুরাধা তরফদার, কৃষ্টি মণ্ডলেরা বলছে, ‘‘ছুটি তো পরেও পাব। কিন্তু এই মুহূর্তে এই কোচিংটাই আমাদের কাছে পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো। দিদিমনিরাও নিজেদের ছুটি বিসর্জন দিয়ে আমাদের যে ভাবে সময় দিচ্ছেন তা সারা জীবন মনে রাখব।’’

শিক্ষিকারা অবশ্য আলাদা করে কোনও কৃতিত্ব নিতে রাজি নন। তাঁরা বলেন, “ছুটির দিনে পড়ুয়াদের ক্লাস নিলে যদি তাদের ভাল হয়, তা হলে কীসের কষ্ট। ওরা ভাল ফল করলে তো আমাদের স্কুলেরই নাম হবে।’’ খুশি অভিভাবকেরাও। তাঁদের একজন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ তরফদার বলছেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের আগ্রহ থাকলেই এ ধরনের ভাল কাজ করা সম্ভব।’’

জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মিতালি দত্ত বলছেন, ‘‘সরকারি নিয়মে এখন স্কুলে ছুটি চলছে। তবে ওই স্কুল যদি পড়ুয়াদের ভাল ফলের জন্য কোচিং ক্লাস করায়, তা হলে তো সেটাকে ভাল উদ্যোগ বলতেই হয়।’’

Summer Holidays Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy