বাড়ির সামনে বসেছে পাহারা। —নিজস্ব চিত্র
ওঁরা ঘর ছেড়েছিলেন রাতের অন্ধকারে। দলবদল করে ঘরে ফিরলেন সেই মধ্য যামেই!
অধীর গড়ে ভাঙন ধরিয়ে ধুলিয়ানের পরে একই কায়দায় বাম পরিচালিত জঙ্গিপুর পুরসভাও দখল করল তৃণমূল। সেই উচ্ছ্বাস ধরা পড়েছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের গলায়। অথচ সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া জঙ্গিপুর পুরসভার ১১ জন কাউন্সিলরকে স্বাগত জানাতে দেখা গেল না স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কাউকেই!
শনিবার গভীর রাতে নিঃশব্দে ঘরে ফিরলেন ওই কাউন্সিলররা। রবিবার সকাল থেকে তাঁদের বাড়ির সামনে পুলিশ প্রহরা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি।
জঙ্গিপুর শহর তৃণমূলের সহ সভাপতি সুকান্ত চৌধুরী অবশ্য বলছেন, ‘‘ওঁদের জঙ্গিপুরে ফেরার খবর আমাদের কাছে ছিল না। তবে রাজ্য নেতৃত্ব যখন দলে যোগদান করিয়েছেন তখন আমরা তাঁদের সঙ্গেই থাকব।”
আর শহর তৃণমূলের সভাপতি অমর চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “এই দলবদল সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত দলের তরফে কিছুই জানানো হয়নি। যা জেনেছি খবরের কাগজ পড়েই। তবে রবিবার টেলিফোনে সদ্য দলে আসা পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়েছেয়। সকলেই পরিচিত মুখ। এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে কোনও অসুবিধা হবে না।”
বুধবার রাতে জঙ্গিপুরের ১১ জন কাউন্সিলর তিনটি টাটা সুমোয় কলকাতা গিয়েছিলেন। ২১ জুলাই সময় মতো পৌঁছতে না পারায় তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিতে পারেননি। তৃণমূল ভবনে তাঁরা শাসক দলে যোগ দেন শনিবার দুপুরে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, ‘‘পুলিশ নিয়ে ঘরে ফিরতে হল। তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের কাউকেই দেখা গেল না। দলবদলের পরে তাঁদের পায়ে তলার মাটি সরে গেল নাকি আরও শক্ত হল তা সময়ই বলবে।’’
রবিবার জঙ্গিপুরে বাড়ি ফিরে দলত্যাগী পুরপ্রধান মোজাহারুল বলছেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পুরসভা চালাতে হয়েছে আমি জানি। টাকার অভাবে একটা রিজার্ভার পর্যন্ত তৈরি করতে পারছিলাম না। পুরসভায় উন্নয়ন করতে গেলে শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। তাই স্বেচ্ছায় সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, এই দলত্যাগে কোনও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জুলুমের শিকার হতে হয়নি। তবে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সব সময় সঙ্গে থাকছে।
তবে ভিন্ন সুর শোনা গেল কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর সমীর পণ্ডিতের গলায়। তাঁর দাবি, বুধবার রাতে জোর করেই তাঁতে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। যা হয়েছে সিপিএমের বিক্ষুব্ধদের ইচ্ছেতেই হয়েছে। তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই। তবে ইদানীং পুলিশের চাপ অসহ্য হয়ে উঠেছিল।
তিনি বলছেন, ‘‘সে দিন রাতেও পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির চাপ ঠেকানোর মতো ক্ষমতা আমার ছিল না। শহরের মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই ভাবছেন টাকার কাছে আমরা বিক্রি হয়ে গিয়েছি। কিন্তু বাস্তবটা তার চেয়েও ভয়াবহ, ভয়ঙ্কর।”
তাহলে এ নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন না কেন?
সমীরবাবু বলছেন, “আর ঝামেলা বাড়াতে চাই না। যা ঘটেছে সেটাকেই মেনে নিয়েছি।”
বিজেপির কাউন্সিলর পুরুষোত্তম হালদার বলছেন, ‘‘লোকে কী ভাবছে তা নিয়েও আমার মাথাব্যথা নেই। কারণ তাদের মনের ধারনা তো আর আমি ভেঙে ফেলতে পারব না। তবে অনুগত কর্মীরা আমার সঙ্গেই আছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই যা করার করেছি।’’ তবে দলের বিরুদ্ধে মোজাহারুল টুঁ শব্দ না করলেও শহরে দলের মধ্যে ভাঙনের দায় এ দিন সরাসরি জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের উপর চাপিয়েছেন দলত্যাগী সিপিএমের আর এক কাউন্সিলর রবিউল হোসেন মণ্ডল।
দলের লোকাল কমিটির সদস্য রবিউল হোসেনের অভিযোগ, দলের মধ্যে দম বন্ধ করা পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হচ্ছিল। প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, কোনও পরামর্শ দেওয়ার অধিকারও তাঁদের ছিল না। নিজের এলাকায় মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য স্বেচ্ছাচার করে চলেছেন। এখন দল ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে তাঁরা সকলেই খুব খুশি।
অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সিপিএমে একক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত কখনও চাপিয়ে দেওয়া যায় না। দলের সিদ্ধান্ত মেনেই আমাকেও জঙ্গিপুরে পুরপ্রধান পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল। জঙ্গিপুরে দলের পদাধিকারী যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাঁদের সকলকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy