Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
আদালতে কর্মবিরতি

জেলে বাড়ছে বন্দির ভিড়

মুর্শিদাবাদ জেলায় বিচারাধীন অভিযুক্তদের রাখার জন্য লালবাগ, জঙ্গিপুর ও কান্দিতে তিনটি উপ সংশোধনাগার রয়েছে। রয়েছে বহরমপুরে কেন্দ্রীয় কারাগারও। লালগোলার মুক্ত কারাগারে অবশ্য শুধুমাত্র সাজাপ্রাপ্তদেরই রাখা হয়। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০২:১১
Share: Save:

টানা ১৭ দিন ধরে চলছে আইনজীবীদের কর্মবিরতি। আর তার জেরেই জেলার সংশোধনাগারগুলিতে উপচে পড়ছে ভিড়। জেলার তিনটি উপ সংশোধনাগারে বড়জোর শ’চারেক বন্দি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। রবিবার সেখানে সংখ্যাটা ৬০০ ছাড়িয়েছে। তবে কিছুটা ভাল অবস্থায় রয়েছে বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। সেখানে তিন হাজার বন্দি থাকার কথা। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে আছেন ২৬৮৯ জন। স্বাভাবিক অবস্থায় গড়ে দু’হাজারের আশপাশে বন্দি থাকেন সেখানে। আদালতে কর্মবিরতির ফলে সেই সংখ্যাটাও স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেড়েছে।

মুর্শিদাবাদ জেলায় বিচারাধীন অভিযুক্তদের রাখার জন্য লালবাগ, জঙ্গিপুর ও কান্দিতে তিনটি উপ সংশোধনাগার রয়েছে। রয়েছে বহরমপুরে কেন্দ্রীয় কারাগারও। লালগোলার মুক্ত কারাগারে অবশ্য শুধুমাত্র সাজাপ্রাপ্তদেরই রাখা হয়।

শুধু এ জেলাতেই নয়, বার কাউন্সিলের ডাকে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে সারা রাজ্য জুড়েই। এর ফলে জামিন অযোগ্য ধারায় ধৃতরা তো বটেই, জামিন যোগ্য সাধারণ মামলাগুলিতেও আদালতে জামিন পেয়েও জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না অভিযুক্তরা। কারণ তাঁদের জামিনের নথিতে আইনজীবীরা স্বাক্ষর করছেন না। রবিবারে স্থানাভাবের কারণে ৩০ জন বন্দিকে জঙ্গিপুর উপ সংশোধনাগার থেকে বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

এর পরেও সেখানে রয়েছেন ২২৬ জন বন্দি। লালবাগ উপ সংশোধনাগারে রবিবারে বন্দি রয়েছেন ২৪৯ জন, কান্দিতে ১০৩ জন। সরকারি ভাবে তিনটি উপ সংশোধনাগার মিলিয়ে ৯২ জন বন্দি রাখার অনুমোদন থাকলেও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে লালবাগ ও জঙ্গিপুরে ১৫০ জন করে বন্দিকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কান্দিতে প্রায একশো জন বন্দিকে রাখা যায়।

জঙ্গিপুর উপ সংশোধনাগারের অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বর্মণ জানান, বাড়তে বাড়তে রবিবার বন্দির সংখ্যা পৌঁছেছিল ২৫৫ জনে। রবিবার তাই ৩০ জনকে বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পাঠাতে হয়েছে। নতুন এসেছেন এক জন। ফলে এখনও সংখ্যাটা ২২৬। তিনটি ঘর। শুধু রাখার স্থানাভাবই তো নয়, তাঁদের জন্য শৌচালয়, স্নান ও পানীয়ের জল, খাবার সব কিছুরই ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কর্মবিরতি মিটলে হয়তো সমস্যাও মিটে যাবে।

লালবাগ উপ সংশোধনাগারের অধিকর্তা দেবাশিস পান বলছেন, “রবিবার সকালে ২৪৪ জন বন্দি ছিলেন। সন্ধেয় আরও পাঁচ জন এসেছেন। আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণেই বন্দির সংখ্যা এতটা বেড়েছে। তবে পাশেই সংশোধনাগারের একটা নতুন ভবন হওয়ায় সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এখনও বহরমপুরে কাউকে পাঠাতে হয়নি। কর্মবিরতি না মিটলে পরে কী হবে তা অবশ্য বলতে পারছি না।”

কান্দিতে অবশ্য রবিবার বন্দির সংখ্যা ছিল ১০৩ জন। নতুন করে এ দিন আর কেউ আসেননি। ফলে রবিবার পর্যন্ত সেখানে তেমন সমস্যা হয়নি। জেলার সরকারি আদালতের মুখ্য আইনজীবী দেবাশিস রায় বলেন, “হাওড়া আদালতে আইনজীবীদের উপর পুলিশি নিগ্রহের প্রতিবাদে জেলার সব আদালতেই আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে। বার কাউন্সিল এই কর্মবিরতি ডেকেছে। আমরাও বার কাউন্সিলের নির্দেশেই জেলা জুড়েই কর্মবিরতি পালন করছি। কোনও আইনজীবী কাজ না করায় কোনও ফৌজদারি মামলাতেই কেউ জামিন পাচ্ছেন না। কারণ জামিনের নথিতে আইনজীবীদের স্বাক্ষর লাগে। ফলে জেল হেফাজতে যেতে হচ্ছে জামিনযোগ্য ধৃত অভিযুক্তদেরও।”

একই কথা বলছেন জঙ্গিপুর অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের সরকারি মুখ্য আইনজীবী সমীর চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলছেন, ‘‘এতে বিচারপ্রার্থীরা সমস্যায় পড়ছেন। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। বার কাউন্সিলের নির্দেশের বাইরে তো আমরা যেতে পারি না। আমাদের দাবি, যে সব পুলিশ অফিসার হাওড়ায় আইনজীবীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে তাদের শাস্তি দিতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jail Court inmates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE