Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
লকডাউনে সামাজিক অপরাধ
Teenage Marriage

চুপিসাড়ে বাড়ছে বাল্যবিবাহ

জেলা প্রশাসনের কাছে এর নির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান নেই।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০৪:১৬
Share: Save:

লকডাউনের স্তব্ধতায় অপরাধের হার পড়েছে। খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি থেকে বোমাবাজি এমনকি নিত্যকার বোমার মহড়াতেও লাগাম টেনেছিল অপরাধ জগৎ। কিন্তু সেই নির্বিঘ্নতার সুযোগ নিয়েই চুপিসারে যে অন্য সামাজিক অপরাধের হার বেড়ে গিয়েছিল, লকডাউন শিথিল হতে খোঁজ মিলেছে তার। পুলিশ থেকে কন্যাশ্রীযোদ্ধা— স্বীকার করছেন সকলেই যে এই পর্বে বেশ কিছু বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে জেলাজুড়ে।

জেলা প্রশাসনের কাছে এর নির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবে, জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা কবুল করছেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, নওদা থেকে ডোমকল, বেলডাঙা কিংবা কান্দি এলাকায় স্কুল পড়ুয়া বেশ কয়েক জন বালিকার বিয়ে দিয়েছে তাদের পরিবারের লোকজন। তাদের মধ্যে এমনও কয়েক জন আছেন, যাঁরা ক’দিন আগে প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দিয়েছিলেন মেয়ে আঠারো না ছুঁলে বিয়ে দেওয়া হবে না।’’ লকডাউনে বন্ধ রয়েছে স্কুল-টিউশন। ফলে কন্যাশ্রী যোদ্ধারাও তাদের সহপাঠী কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগরাখতে পারছে না। বাল্যবিবাহের খোঁজ পাওয়ার এটাই সব চেয়ে সুগম সূত্র। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মেয়ের আপত্তিতে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলেও তার হদিশও করতে পারেনি কন্যাশ্রী যোদ্ধারা। পুলিশেও তা ঘুণাক্ষরে টের পায়নি। স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অত্যন্ত অনাড়ম্বরে, রাতের অন্ধকারে বাড়িতে মৌলবি ডেকে বা স্থানীয় কোনও মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। হরিহরপাড়া ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধারা জানতে পেরেছে গত কয়েক সপ্তাহে হরিহরপাড়ার ডাঙাপাড়া গ্রামে পাঁচটি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে চুপিসারে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম বিয়ে দিতে সম্মত না হওয়ায় দূরের মৌলবি ডেকে সেই নিকাহ হয়েছে। লকডাউনের মাঝেও হরিহরপাড়ার গজনীপুর, রুকুনপুর-সহ একাধিক জায়গায় খবর পেয়ে নাবালিকার বিয়ে রদ করা হলেও ওই ব্লকগুলিতে নিশ্চুপে বিয়ে হয়েছে এমন সংখ্যাটাও অন্তত সাত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে দিন কয়েকের মধ্যে যে সমস্ত নাবালিকার বিয়ে হয়েছে তাদের বয়স বারো থেকে পনেরোর মধ্যে। অনেক পাত্রের বয়স একুশ পেরোয়নি। আর এ ব্যাপারে প্রচ্ছ্ন্ন্ সুযোগ দিয়ে বাড়তি মুনাফা লুটছে এক শ্রেণির রেজিস্ট্রার। নওদার এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘স্থানীয় রেজিস্ট্রারেরা ছাপানো কাগজ নিয়ে এই সময়ে এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে ঘুরেছেন আর পয়সা লুটেছেন।’’ লকডাউনে বন্দি থাকায় সে খবর পৌঁছয়নি কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কাছে। হরিহরপাড়ার সামিমা মণ্ডল বলে, ‘‘স্কুল-টিউশন বন্ধ থাকায় আমরা খবর পাইনি এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে গোপনে নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে।’’ হরিহরপাড়া ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কো-অর্ডিনেটর জাকিরন বিবি বলেন, ‘‘লকডাউনের মাঝেও আমরা একাধিক বাল্যবিবাহ আটকেছি ঠিকই কিন্তু অনেক বিয়েই যে হয়েছে তার খবরও পেয়েছি। কিন্তু সময়ে পৌঁছতে পারিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teenage Marriage Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE