হুইসলটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে এক বুক দম নিয়ে বাজিয়ে ফেললেন জানুফা বেওয়া।
‘‘বোম্বে গিয়েও বাজিয়েছ... ওই কি একটা নাম যেন, মনোজ না কি সে বললে বাজাতে, এমন ফুঁ মেরেছি...।’’ জানুফা হাসছেন। ভোরের দিকে তাঁর যে কঠোর মুখটা দৌলতাবাদের গা গঞ্জের মানুষ দেখতে অভ্যস্ত, তার সঙ্গে অবশ্য এই মুখের তেমন মিল নেই।
ভোরের আলো দূরে থাকতেই সজনের এক গোছা শুকনো ডাল আর মুখে ওই হুইসল নিয়ে জানুফার রাগত মুখটা এখনও মনে রেখেছে দৌলতাবাদ— ‘‘মাঠে ময়দানে যেখানে সেখানে মাঠে (প্রাতঃকৃত্য) করতি বসলেই হল!’’
নির্মল বাংলা মিশনের আদর্শ বুকে জানুফার সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ চেহারাটা দেখলে হয়ত চমকে উঠতেন মুম্বইয়ের সেই নায়কও!
বার তিনেক কলকাতা গিয়েছেন বটে, তা বলে মুম্বই! চিঠিটা হাতে পেয়ে তাই কিঞ্চিৎ ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। ‘অতটা পথ, একা একা!’ বলিউডের ব্যস্ত অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ীকে মিশন নির্মল বাংলরা গল্প শুনিয়েও সে কথা তবুল করে এসেছেন জানুফার। অকপট গ্রামীণ মহিলা মঞ্চে বসেই শুনিয়ে এসেছেন, তাঁর প্রথম বিমানে ওঠার ‘ভৌতিক’ অভিজ্ঞতাও। যা শুনে হেসে কুটোপুটি মনোজ। জানুফার অবশ্য দৌলতাবাদের কাছে গাঁধিবুড়ি। ভোরের বাতাস চিরে মাঠে ময়দানে ঘুরে শৌচকর্ম করছে কেউ দেখলেই হুইশেলমুখে মারমুখী হয়ে ওঠা মহিলাকে জেলা সদরও এখন ওই নামেই চেনে।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা অক্ষয়কুমারের কাছ থেকে পুরষ্কার নিয়েছেন। তাঁকে শুনিয়েছেন মুর্শিদাবাদকে কিভাবে নির্মল জেলা হিসেবে গড়ে তুলছেন, তার কথা। এ বার ডাক পড়ল দৌলতাবাদের গাঁধি বুড়ির।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দূরদর্শন মুম্বই থেকে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁরা গাঁধিবুড়ি এবং বহমরপুরে নলেজ লিঙ্ক হিসেবে কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী গোলাপী বর্মনকে মুম্বই যাতয়াতের খরচ দেয়। দিন কয়েক আগে, গাঁ-গঞ্জ ছেড়ে চাঁরা বিমানে সটান পাড়ি দেন মুম্বইয়ে। দূরদর্শনের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মনোজ।
বহরমপুর ব্লকের ছয়ঘরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছয়ঘরি পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা জানুফা। প্রায় ১১ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। নাতিকে নিয়ে কুঁড়েঘরে থাকেন প্রায় ৭১ বছর বয়সি জানুফা। প্রশাসনের তরফে ভোর থেকে এটাই তাঁর কাজ।
জানুফা বলছেন, ‘প্রথমে তো সকলে বুঝতে চাইত না। জোর করে মাঠ থেকে তুলে দিলে তবে উচিৎ শিক্ষা হয়েছে!’’
তবে, মজার ব্যাপার, জানুফার নিজের বাড়িতেও ছিল না শৌচালয়। প্রশাসনের কাজে নেমে এখন শেষতক বাড়ির মুরগি বিক্রি করে একটি শৌচালয় তৈরী করেছেন তিনি। মনোজকে সে কথা জানিয়ে গাঁধী বুড়ি বলে এসেছেন, ‘‘আমি কিন্তু কাউকে ছেড়ে কথা বলব না। শহরের রাস্তার পাশে কাউকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখলে একইরকম ধমক দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy