নিহত বীণাপাণিদেবী।
ঘুমন্ত অবস্থায় এক বৃদ্ধাকে খুন করল দুষ্কৃতীরা। নিহতের নাম বীণাপাণি বিশ্বাস (৭০)। বুধবার রাতে হাঁসখালির বগুলা কলেজপাড়ার ঘটনা। পুলিশের দাবি, ঘুমন্ত অবস্থায় ওই বৃদ্ধার মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বালিশ চেপে তাঁর শ্বাসরোধ করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে ও পুলিশ কুকুর নিয়ে এসে তদন্তের দাবিতে দেহ আটকে রেখে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান লোকজন। জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “খুনের কারণ স্পষ্ট নয়। তবে দুষ্কৃতীরা যে ওই বৃদ্ধাকে খুনের উদ্দেশেই এসেছিল তা পরিষ্কার।”
ওই বৃদ্ধার স্বামী মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে সপরিবার থাকেন দমদমে। ছোট ছেলে ওমানে কাজ করতেন। মাস ছয়েক আগে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বছর ছয়েকের নাতনি আর ছোট বৌমা অসীমাকে নিয়ে কলেজপাড়ার বাড়িতে থাকতেন বীণাপাণি। বৃদ্ধা থাকতেন রাস্তার দিকের ঘরে। পাশের ঘরে মেয়েকে নিয়ে থাকেন বছর পঁচিশের অসীমা। বৃহস্পতিবার সকালে তিনিই প্রথম শাশুড়িকে ডাকতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে অসীমা গৃহশিক্ষকতা শুরু করেন। প্রতিদিন সকালে তিনি পড়াতে যান। এ দিনও সকাল ৭টা নাগাদ তিনি বের হতে গিয়ে দেখেন, কোলাপসিব্ল গেটের তালা খোলা হয়নি। অসীমার কথায়, “অন্য দিন মা আগেই উঠে দরজার তালা খুলে কাজ শুরু করে দেন। এ দিন ঘুম থেকে ওঠেননি দেখে জানালা দিয়ে ডাকি। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। ঠেলা দিতেই দরজা খুলে যায়। অথচ অন্য দিন তিনি দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করেই ঘুমোতেন।’’
বাড়ির বাইরে উদ্বিগ্ন পড়শিরা। নিজস্ব চিত্র
অসীমা জানিয়েছেন, ভিতরে ঢুকে তিনি দেখেন, বীণাপাণির মুখের উপর বালিশ চাপা দেওয়া। সারা মুখে রক্ত লেগে। খাটের পাশে আলমারি খোলা। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল জামাকাপড়। আলমারিতে সামান্য কিছু সোনার গয়না আর হাজার দু’য়েক টাকা খোয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ। অসীমার চিৎকারে ছুটে আসেন পড়শিরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ আসার পরে তাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা পুলিশ কুকুর নিয়ে এসে তদন্তের দাবি জানান। কুকুর আসতে দেরি হওয়ায় এলাকার লোকজন রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ করেন। এলাকার মহিলারা লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে মিছিল করে বগুলা বাজারে এসে স্টেশন মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বিকেলে পুলিশ কুকুর এলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই এলাকায় একের পর এক বয়স্ক মানুষের উপরে হামলার ঘটনা ঘটছে। দিন পনেরো আগে ওই এলাকাতে ঘুমন্ত আবস্থায় আক্রান্ত হন এক বৃদ্ধা। মাস কয়েক আগে নবদ্বীপেও খুন হয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। একের পর এক এমন ঘটনার কোনও সুরাহা না হওয়ায় এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে দমদম থেকে ছুটে আসেন বড় ছেলে বিপুল বিশ্বাস। তিনি বলেন, “মা কারও সাতেপাঁচে থাকতেন না। তাঁকে কেন এ ভাবে খুন হতে হল বুঝতে পারছি না। পুলিশ প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করুক।” জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ডাকাতি নয়, অন্য কোনও কারণেই খুন হতে হয়েছে বৃদ্ধাকে। বেশ কিছু অসঙ্গতিও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তবে যে কায়দায় বাড়িতে ঢুকে বৃদ্ধাকে খুন করা হয়েছে, মনে হচ্ছে দুষ্কৃতীরা এই পরিবার সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় আগে থেকেই জানত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy