Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

অস্থি বিভাগে ‘ওটি’ পেতেই কাটছে ৪ মাস

বাড়ির বারান্দা ধোওয়ার সময়ে পিছলে কোমরে চোট পেয়েছিলেন বহরমপুরের ইলা চক্রবর্তী। বছরের গোড়ার ঘটনা। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দেখে জানান, অস্ত্রোপচার করতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

বাড়ির বারান্দা ধোওয়ার সময়ে পিছলে কোমরে চোট পেয়েছিলেন বহরমপুরের ইলা চক্রবর্তী। বছরের গোড়ার ঘটনা। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দেখে জানান, অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু ১৭ জুলাইয়ের আগে দিন ফাঁকা নেই।

নবগ্রামের কানফলার সমর মণ্ডল মোটরবাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ভর্তি। পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তা অগস্টের আগে সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করিয়ে নিয়েছেন।

মোদ্দা যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে চার মাসের আগে ‘ডেট’ পাওয়া যাচ্ছে না মেডিক্যালের অস্থিশল্য বিভাগে। তার মানে কি হাসপাতালই কি কার্যত রোগীদের তুলে দিচ্ছে না নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালের হাতে?

নদিয়ায় শক্তিনগর হাসপাতাল থেকে রোগীকে নার্সিংহোমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। সেখানে অবশ্য ‘ডেট’ না পাওয়ার কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছিল প্রয়োজনীয় ষন্ত্র না থাকার কথা। ওই হাসপাতালের অস্থি বিভাগের প্রধান অঞ্জন সেনগুপ্ত জানান, জরুরি বিভাগের রোগীদের জরুরি ভিত্তিতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। যাঁরা বহির্বিভাগ থেকে তাঁর অধীনে ভর্তি হন, তাঁদের গড়পড়তা দিন পনেরো সময় লাগে।

পরিস্থিতি তুলনায় ভাল কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে অস্থিশল্য বিভাগে অস্ত্রোপচারের দিন পেতে এখন গড়ে তিন থেকে সাত দিন সময় লাগছে। তার কারণ, ওই হাসপাতালে অস্থিশল্য চিকিৎসকের তেমন অভাব নেই। তবে কখনও বেশি সময় যে লাগে না, তা নয়। হাসপাতালের সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস জানান, মূলত অ্যানাস্থেসিস্টের অভাবে অস্ত্রোপচার থমকে থাকে কখনও-কখনও। তবে জরুরি ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ফেলে রাখা হয় না। তার ব্যবস্থা রয়েছে।

তা হলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে এত দেরি হচ্ছে কেন? কর্তৃপক্ষ এর জন্য রোগীর ভিড়কেই দায়ী করছেন। তাঁদের হিসেবে, রোজ গড়ে ১৫ জন রোগী ভর্তি হন। অস্ত্রোপচার হয় গড়ে পাঁচটি। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অজয় রায় জানান, হাসপাতালে অস্থি বিভাগে ইউনিট-১ ও ২ মিলিয়ে আট জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু প্রতি দিন যে পরিমাণ রোগীর চাপ সামলাতে হয়, তাতে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানো দররকার তো বটেই। সেই সঙ্গে, অস্ত্রোপচারের জন্য নতুন করে পরিকাঠামোও গড়ে তোলা দরকার। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম থাকাতেই অস্ত্রোপচারের জন্য এখন রোগীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে!

মেডিক্যালের ওই বিভাগে আরএমও থাকার কথা তিন জন, রয়েছেন দুজন। হাউসস্টাফ ছ’জনের জায়গায় এক জনও নেই। মেডিক্যাল অফিসার ছ’জন থাকার কথা। কেউ নেই। এক জন চিকিৎসক প্রতি দিন বহির্বিভাগে গড়ে চারশো রোগী দেখেন। তার মধ্যে মাসে ৪০ জনের অস্ত্রোপচার হলে প্রায় ১২০ জনকে অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ইলা চক্রবর্তীর মেয়ে শম্পা মণ্ডল জানান, ফেব্রুয়ারিতে অ্যানাথেটিস্ট লিখে দিয়েছিলেন অস্ত্রোপতার করা যাবে। কিন্তু তারিখ দেওয়া হয় ১৭ জুলাই। ‘‘কোমর ভেঙে যাওয়ায় মা হাঁটাচলা করতে পারছেন না। ঘুমের ওষুধ খেয়েও যন্ত্রণায় ঘুমোতে পারেছেন না। নার্সিংহোমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওই অস্ত্রোপচার করতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে। অত টাকা নেই। ১৭ জুলাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।’’ কবে এই অবস্থা পাল্টাবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Orthopedic department Delayed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE