Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
উঠে দাঁড়াল শাবানা আজমি

জাল শংসাপত্রে বিয়ের রেজিস্ট্রি

নওদা ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে বিয়ের রেজিস্ট্রার, কন্যাশ্রী ও পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সভা করা হয়েছিল আমতলায়। পুলিশকর্তাদের সামনেই শাবানা বলে, ‘‘স্কুলের নামে জাল প্রমাণপত্র দেখিয়ে বাবা-মায়েরা মেয়ের অমতে বিয়ে দিচ্ছেন। সেই প্রমাণপত্রকে মূলধন করে রেজিস্ট্রার তার রেজিস্ট্রিও করছেন। কী করে এটা চলছে, তা প্রশাসনকে দেখতে হবে।’’

 বৈঠক: সভায় হাজির নাবালিকারা। নিজস্ব চিত্র

বৈঠক: সভায় হাজির নাবালিকারা। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
নওদা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

নাবালিকা বিয়ে রোখার শিবিরে উঠে দাঁড়িয়ে আগেও এক ছাত্রী বলেছিল, তার অমতে বাবা-মা তাকে রেজিস্ট্রারের কাছে নিয়ে গিয়ে সইসাবুদ করিয়েছে। প্রশাসন সেই বিয়ে আটকে দিয়েছে। এ বার নওদার আমতলায় এমনই এক সভায় উঠে দাঁড়িয়ে অন্নদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শাবানা আজমি অভিযোগ করল, অনেক ক্ষেত্রে জাল শংসাপত্র দিয়ে বয়স ভাঁড়িয়েও মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা।

নওদা ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে বিয়ের রেজিস্ট্রার, কন্যাশ্রী ও পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সভা করা হয়েছিল আমতলায়। পুলিশকর্তাদের সামনেই শাবানা বলে, ‘‘স্কুলের নামে জাল প্রমাণপত্র দেখিয়ে বাবা-মায়েরা মেয়ের অমতে বিয়ে দিচ্ছেন। সেই প্রমাণপত্রকে মূলধন করে রেজিস্ট্রার তার রেজিস্ট্রিও করছেন। কী করে এটা চলছে, তা প্রশাসনকে দেখতে হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জন্মের প্রমাণ দাখিল করার সবচেয়ে ভাল উপায় পুরসভা বা গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়া শংসাপত্র দাখিল করা। তা যাদের থাকে না, আধার কার্ড তাদের সহায় হতে পারে। তা-ও না থাকলে সাধারণত স্কুলে ভর্তির সময়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য চিঠি দিয়ে তাদের বয়স জানান। সেটাই প্রামাণ্য বলে গৃহীত হয়। প্রাথমিক স্কুলের পাট শেষ করে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সময়ে সেই বয়সই উল্লেখ করা হয়। পরে মাধ্যমিক দেওয়ার সময়ে অ্যাডমিট কার্ডে পাকাপাকি উঠে যায় সেই বয়স। মাধ্যমিক দেওয়ার আগেই পড়া ছাড়লে বিদ্যালয় থেকে তাকে যে ‘স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়, তাতেই বয়স উল্লেখ করা থাকে। বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তা ধরে হিসেব করতে পারেন রেজিস্ট্রার।

এই ‘স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট’-ই জাল হচ্ছে বলে অভিযোগ শাবানার। যে স্কুলের নামে ওই সার্টিফিকেট, সেখানে গিয়ে তা যাতে মিলিয়ে দেখা হয়, সেই অনুরোধ জানায় শাবানা। তা শুনে নওদার বিডিও লিটন সাহা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুস্মিত সাধুখাঁকে বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা দরকার। রেজিস্ট্রারের সন্দেহ হলে তাঁরও উচিত স্কুলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যে, শংসাপত্র আসল না জাল।’’

ঐকতান সভাগৃহে বিডিও ছাড়াও ছিলেন পুলিশের এসআই বিশ্বজিৎ ঘোষাল ও কন্যাশ্রীর মেয়েরা। নওদার সরকার-স্বীকৃত রেজিস্ট্রার রেজিস্ট্রার সুলতান আলি, বিধানচন্দ্র বিশ্বাস, একলাখ রহমান বিশ্বাস ও আনারুল হক এসেছিলেন। নাবালিকার বিয়ে রুখতে রেজিস্ট্রারদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে কথাও ওঠে। বিডিও বলেন, ‘‘দেখতে হবে, রেজিস্ট্রি ছাড়া কোনও বিয়ে যেন না হয়। ১৮ বছর বয়সের আগেও যেন না হয়।’’ তাঁর পরামর্শ, কোনও রেজিস্ট্রারের বৈধতা সম্পর্কে সন্দেহ হলে ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের কাছে তাঁর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়াও জরুরি। কিছু দিনের মধ্যেই সরকারি রেজিস্ট্রারদের তালিকা এলাকায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

শাবানা জানায়, কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হয়। রাস্তায় সিভিক ভল্যান্টিয়ার থাকলেও তারা কিছু করে না। সেই দুশ্চিন্তাতেও কিছু বাবা-মা তড়িঘড়ি মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। এসআই বলেন, এই দিকে তাঁদের নজর থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Falsifying Age certificate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE