Advertisement
E-Paper

আপৎকালীন রক্ত জোগাড় করতে নাজেহাল রোগীরা

কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালের এই ছবি আসলে নিত্যদিনের। চব্বিশ ঘণ্টায় প্রতি মুহূর্তে চলছে রোগী আর রক্ত জোগাড় করা নিয়ে টানাপড়েন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২২
নিজস্ব চিত্র  

নিজস্ব চিত্র  

রাত তখন প্রায় দেড়টা। হাসপাতালের মাইকে ডাক পড়ল অন্তসত্ত্বা ঝুমা সরকারের বাড়ির লোকেদের। ঝিমুনি কাটিয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠলেন ঝুমার দাদা প্রশান্ত মণ্ডল। তাঁকে জানানো হল—ঝুমার সিজার করা হবে। এখনই দু’বোতল রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু এত রাতে রক্ত? যেতে হবে সেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বরে। কী ভাবে যাবে তাঁর পরিবার? এত রাতে টোটোও নেই। তা হলে? ঘোর সমস্যায় পড়লেন প্রশান্ত। কী করবেন, বুঝতে পারছেন না। কিন্তু ভাবার মতো সময়ও নেই।

অগত্যা রাতের নিঝুম রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলেন। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পৌঁছলেন। শেষ পর্যন্ত রক্ত নিয়ে যখন ফিরলেন, ততক্ষণে পেরিয়েছে প্রায় দু’থেকে আড়াই ঘণ্টা সময়। বোনের শারীরিক অবস্থা তখন অনেকটাই খারাপ।

কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালের এই ছবি আসলে নিত্যদিনের। চব্বিশ ঘণ্টায় প্রতি মুহূর্তে চলছে রোগী আর রক্ত জোগাড় করা নিয়ে টানাপড়েন। কারণ, জেলা হাসপাতালের দুটো ক্যাম্পাস— জেলা সদর হাসপাতাল আর শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল। সদর হাসপাতালে প্রসূতি আর শিশু বিভাগ। মা ও শিশু মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চারশো রোগী ভর্তি থাকে সদর ক্যাম্পাসে। কোনও কোনও সময় সংখ্যা আরও বাড়ে। যে কোনও মুহূর্তে রক্তের প্রয়োজন পড়ে হাসপাতালে। আর সেই সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।

জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন রোগীর সংখ্যা দিনে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন। সেক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজনে রোগীর বাড়ির লোকদের ছুটতে হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখান থেকে রক্ত নিয়ে আবার তড়িঘড়ি সদরে ফেরা। তা হলে সঙ্কটাপন্ন রোগীকে রক্ত দেওয়া সম্ভব হয়। রোগী-পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজটা কিন্তু মোটেও সহজ নয়। দিনের বেলা ওই রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট থাকে। সেই যানজট সামলে শক্তিনগরে পৌঁছানো রীতিমত কঠিন বিষয়। তার উপরে হাসপাতালের আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা টোটোচালকরা যে মুহূর্তে বুঝতে পারেন জরুরি কারণে বা রক্তের প্রয়োজনে টোটো চাপছেন রোগীর আত্মীয়েরা, সঙ্গে সঙ্গে টোটো-ভাড়া হেঁকে বসেন অনেকটাই।

আবার, রাতের বেলা অন্য সমস্যা। টোটো দূরস্থান, কোনও ধরনের যানবাহন মেলে না শক্তিনগরে যাওয়ার জন্য। জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা রোগীর বাড়ির লোকেরা অসহায় হয়ে পড়েন। বিশেষত, যদি রোগী-পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কোনও পুরুষ না থাকলে, রাতে অত দূরে রক্ত আনতে যাওয়া আরও সমস্যার— অভিযোগ রোগীদের স্ত্রী-কন্যাদের।

সমস্যা যে রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা হাসপাতালের কর্তারাও। হাসপাতাল সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “এটা একটা বিরাট সমস্যা। সদর থেকে শক্তিনগরে গিয়ে রক্ত নিয়ে আসতে প্রায় দেড় থেকে দু’ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এর মধ্যে রোগীর অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। আমরা নিজেরাও বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য সদর হাসপাতালে একটি ব্লাড স্টোর ইউনিটের প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত অনুমোদন না মিললেও সদর হাসপাতালে ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রায় একশো বোতল রক্ত সংরক্ষণ করে রাখা যাবে ওই ইউনিটে। প্রতিটি গ্রুপের দশ বোতল করে রক্ত থাকবে সেখানে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “আমরা সদর হাসপাতালে ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট চালু করার জন্য স্বাস্থ্যভবনে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করছি, খুব শীঘ্রই আমরা অনুমোদন পেয়ে যাব।”

Blood Emergency Krishnanagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy