Advertisement
১৮ মে ২০২৪
বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল

উকুনের সংসার, পোশাক জোটে না আবাসিকদের

মাস দু’য়েক আগে শরীরে সুতো ছিল না ওঁদের। কেন? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্বিকার গলায় জানিয়েছিলেন, ‘‘গায়ে বড় উকুন। কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে যে!’’গ্রীষ্ম ভেঙে এখন ভাদুড়ে বর্ষা। তবে সে পোশাক এখনও গায়ে ওঠেনি তাঁদের। কেন?

বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে এ ভাবেই পড়ে থাকে রোগীরা।

বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে এ ভাবেই পড়ে থাকে রোগীরা।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৯
Share: Save:

মাস দু’য়েক আগে শরীরে সুতো ছিল না ওঁদের। কেন?

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্বিকার গলায় জানিয়েছিলেন, ‘‘গায়ে বড় উকুন। কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে যে!’’

গ্রীষ্ম ভেঙে এখন ভাদুড়ে বর্ষা। তবে সে পোশাক এখনও গায়ে ওঠেনি তাঁদের। কেন?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘গা থেকে উকুন যায়নি যে।’

মহিলা ও পুরুষ-সহ প্রায় ষাট জন আবাসিক উকুনের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে নগ্ন হয়ে ঘুরছেন।

কয়েক বছর আগে কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতালে রোগিণীদের উলঙ্গ রাখা নিয়ে রাজ্য তোলপাড় হয়েছিল। ভবিষ্যতে কোনও সরকারি মানসিক হাসপাতালে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না-হয়, সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ জারি করেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তারপরেও যে ছবিটা বিশেষ বদলায়নি তা বহরমপুরের ঘটনাতেই স্পষ্ট।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিষয়টি জানিয়ে হাসপাতালের সুপার ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। কিন্তু তারপরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বরং হাসপাতালের সুপার পবিত্র সরকারের দাবি, ‘‘এমন কোনও ঘটনাই হাসপাতালে ঘটেনি। এ সব বাজে কথা। হাসপাতালে উকুন কোথা থেকে আসবে?’’

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ফি বছর ১৫ অগস্ট মানসিক আবাসিকদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে। এ বারেও সেই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির সময় বিষয়টি নজরে আসে ওই সংস্থার সদস্যদের। আবাসিকরা তাঁদের কাছে অভিযোগ জানান, উকুনের কারণে তাঁরা পোশাক পরতে পারেন না।

জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনও ফল না মেলায় ওই সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয় স্বাস্থ্য ভবনে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য তিন জনের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরা আচমকা হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন।’’

তবে এমন ঘটনা বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে এই প্রথম নয়। গত কয়েক বছর ধরেই নগ্ন অবস্থায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় আবাসিকদের। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই সাময়িক হইচই হয়। তারপর ফের বিষয়টি থিতিয়ে যায়। হাসপাতালের ছবিটা বদলায় না। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে রত্নাবলী রায় বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের এমন অবস্থার কথা জানিয়ে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বুধবার নারী ও শিশু কল্যাণ উন্নয়ন মন্ত্রী শশী পাঁজা ফোন করে বিষয়টি জানতে চান। তিনি গোটা বিষয়টি লিখিত আকারে তাঁর কাছে পাঠাতে বলেন। সেই মতো চার পাতার রিপোর্টও পাঠানো হয়।

এ দিকে ওই তদন্তের কথা জানতে পেরে হাসপাতাল নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বর সাফ-সুতরো করা, ভলিবল কোর্টে জাল টাঙানো থেকে আগাছা সাফাইয়ের কাজ চলছে। যদিও পবিত্রবাবু বলছেন, ‘‘তদন্তের কথা আমার জানা নেই।’’ এ দিকে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে সুপারকে অনুরোধ করা হয়েছিল আবাসিকদের চুল ও দাড়ি কাটানোর ব্যবস্থা করতে। যা শুনে সুপারের ঘরে বসে হাসপাতালের চিকিৎসক বিশ্বজিৎ সিংহ ফোড়ন কাটেন, ‘‘দাড়ি রাখা তো এখন হাল ফ্যাশন!’’

রত্নাবলী রায়ের অভিযোগ, ‘‘সরকারের তরফে কোনও রকম নজরদারি নেই। আর সেই সুযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যা খুশি করে যাচ্ছেন।’’ তবে তদন্ত দল আসার খবর পেয়ে মহিলা ও পুরুষ আবাসিকদের পোশাক দেওয়া হয়েছে। তবে ওই পোশাকেও উকুন আছে বলে প্রতিবাদ জানিয়ে কয়েকজন আবাসিক সেই পোশাকও নেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pavlov mental Hospital patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE